রেলে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে ৯১ কিলোমিটার

93

রাহুল দাশ নয়ন

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নিরাপদ ও কম সময়ের মধ্যে ট্রেন চালাতে ৫৪ বছর পর ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন (ইলেকট্রিক ট্রাকশন) প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করছে রেলওয়ে। নতুন করে এ প্রকল্পটির সমীক্ষা কাজ শুরু হচ্ছে। সমীক্ষা শেষে কর্ডলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুটে দূরত্ব কমবে প্রায় ৯১ কিলোমিটার। ১৯৬৯ সালে প্রথমবার কর্ডলাইন প্রকল্পটির উদ্যোগ নেয়া হলেও ৫৪ বছর ধরে প্রকল্পটি থমকে আছে। ২০০৬ সালে সর্বশেষ কর্ডলাইন প্রকল্পের সমীক্ষা হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রেনের সময়, ব্যয়, দূরত্ব সবই কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরী সহায়তা প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান পুনর্বাসন কর্মকর্তা (পিবিআরএলপি) মো. মাহবুবুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, বর্তমান সময়ে ঢাকা থেকে ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া ঘুরেই কুমিল্লা পর্যন্ত ট্রেন আসতে অনেক সময় লাগে। রেল ম্যাপ অনুযায়ী অনেকটা ইউ টাইপের লাইন পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে হয়। এখন আমাদের নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন হয়ে গেছে। আমরা নারায়নগঞ্জ থেকে কুমিল্লা অথবা লাকসাম পর্যন্ত কর্ডলাইন করতে চাইছি। এ পর্যন্ত কর্ডলাইন হলে প্রায় ৯১ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সরকার এতদিন কর্ডলাইন করবে চিন্তা করলেও হয়ে উঠেনি। চলমান সমীক্ষা কাজ শেষ হলে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ কর্ডলাইন নির্মাণ কাজ শুরু হবে। প্রকল্প কাজ শেষ হলে সময়, ব্যয়, দূরত্ব সবই কমবে।’ গতকাল মঙ্গলবার রেলভবনে ‘রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরী সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ১১টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা তৈরির যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সেখানে কর্ডলাইন প্রকল্পটি আছে। এ প্রকল্পের অধীনে কর্ডলাইন প্রকল্পটির সমীক্ষা আপডেট করা হবে।
গতকাল রেলভবনে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হার্ডিঞ্জ সেতু শতবর্ষ পার করেছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশাপাশি একটি নতুন সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে যাচাইকরণ ও বিস্তারিত নকশা তৈরি, নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা-লাকসাম রুটে কর্ডলাইন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কর্ডলাইন নির্মিত হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৯১ কিলোমিটার কমে যাবে।’
জানা যায়, ২০২০ সালে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরী সহায়তা প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মূলত শেষ হওয়ার বছরেই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে রেলওয়ে। গতকাল সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং যৌথ পরামর্শ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্স গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড (জাপান) এর জিএম ইউজি অসানো চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
রেলওয়ে পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৩২৪ কিলোমিটার। এ পথে ঢাকা-লাকসাম প্রায় ৯০ কিলোমিটার নতুন কর্ডলাইন নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে। কর্ডলাইনে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ উভয় ট্রেন চলাচল করবে। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের সুফল নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সমীক্ষা শেষে কর্ডলাইন নির্মাণ প্রকল্পটি আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হলে সুফল পাবে যাত্রীরা। কর্ডলাইনে সময় বাঁচবে যাত্রীদের।
১৯৬৯ সালে কর্ডলাইন নিয়ে সমীক্ষায় তিনটি বড় ও মাঝারি সেতুসহ ২৬ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৬-৭৭ সালে আবারো এর নির্মাণ নিয়ে অগ্রগতি হলে তখন বাজেট ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। ১৯৯৮-৯৯ সালে রেল পুনঃগঠন সংস্কার প্রণয়নে গঠিত কমিটি এই কর্ডলাইন নির্মাণে আবারো সুপারিশ করে এবং তখন খরচ ধরা হয় ৯০০ কোটি টাকা। ২০০৬ সালে ফের সমীক্ষা চালানো হয় এবং এই সমীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয় ২০০৮ সালে। সেই রিপোর্টে এর বাজেট ধরা হয় ২৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি নতুন করে শুরু হলে ব্যয় কয়েকগুণ বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইনটি নির্মাণ হলে বর্তমান গতিতে ট্রেন চললেও সময় লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা। কর্ডলাইনে সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চলতে পারবে। এতে আড়াই ঘন্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলবে। কর্ডলাইনের সঙ্গে লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত লাইন ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন করে নিলেই এ রুটে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব। যে কারণে চলমান লাইনকেই খুব সহজে কর্ডলাইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু হলো। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে মোট ২৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরী সহায়তা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।