রেলমন্ত্রীর আত্মীয়কে জরিমানা, বরখাস্ত হলেন টিটিই!

19

বিনা টিকিটধারী তিন যাত্রীর কাছ থেকে রেলওয়ের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন টিটিই।
রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয়’ পরিচয়ে বিনা টিকিটের তিন ট্রেন যাত্রীর সংগে ‘অসদাচরণ’ করার দায়ে ঈশ্বরদীর ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক বা টিটিই’ শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বরখাস্তের বিষয়টি মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পাকশীর ডিসিও নাসির উদ্দিন। রেলমন্ত্রীর আত্মীয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটার কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে তাকে মোবাইল ফোনে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ জানানো হয়। শুক্রবার (৬ মে) থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে।
জানা যায়, বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে জংশন স্টেশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত। ঘটনার রাতে টিটিই শফিকুল ইসলাম ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত ছিলেন। আবার ট্রেনে দায়িত্বরত অবস্থায়ই তিনি বরখাস্তের আদেশটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন।
রেলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ৫ মে দিবাগত রাতে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে চেপে বসেন। এসময় ট্রেনের দায়িত্বরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) নুরুল আলমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে টিকিট কাটার পরামর্শ দেন। এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই শফিকুল ইসলাম ওই তিন ট্রেন যাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট ১০৫০ টাকায় জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট বানিয়ে দেন। এসময় ট্রেনে দায়িত্বরত এ্যাটেনডেন্টসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ না করলেও তারা ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ করার অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।
বরখাস্ত আদেশের বিষয়টি ঈশ্বরদীর টিটিই হেড কোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর মো. বরতুল্লাহ আলামিন মোবাইল ফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে অবহিত করেন। সেসময় তিনি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত ছিলেন।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে সুন্দরবন ট্রেনে বিনা টিকিটধারী তিন ট্রেনযাত্রীর সঙ্গে দায়িত্বরত টিটিই অসদাচরণ করেছেন বলে তারা রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে অভিযোগ দেন। বিষয়টি আমাকেও অবহিত করা হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে তার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ঘটনা সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম জানান, বরখাস্তের বিষয়টি আমি ট্রেনে দায়িত্বরত অবস্থায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এ কারণে শুক্রবার থেকে কাজে যাওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ঈশ্বরদী থেকে অল্প বয়সী তিন ট্রেন যাত্রী রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি কেবিনে ওঠেন।
মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ায় আমি সম্মান দেখিয়ে এসিও স্যারের পরামর্শে এসির টিকিট না কেটে সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের বানিয়ে দেই। আমি তো তাদের সঙ্গে কোনোরকম অসদাচরণ করিনি।
তিনি আরও বলেন, বরখাস্তের বিষয়টি জানার পর তিনি পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন। বাংলানিউজের খবর