রেলগাড়ি ঝিকঝিক-যাবে কক্সবাজার ঠিক ঠিক

24

মুশফিক হোসাইন

 

ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্ন বাংলাদেশি পর্যটক বিশেষ করে চাটগাঁইয়াদের দীর্ঘদিনের। নানান জটিলতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। রেলগাড়ি চড়ার আগে রেলের ইতিহাস জানা যাক! বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর রেল ইঞ্জিল আবিষ্কার পৃথিবীর উন্নয়নের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছিল। পশ্চিমা বিশ্ব শিল্পবিপ্লবের আশির্বাদে শনৈ শনৈ উন্নতির শিকরে পৌঁছে যায়Ñষোলশতকের মাঝামাঝি জার্মানিতে প্রথম ঘোড়ায় চালিত রেলগাড়ির উদ্ভুত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড ট্রভিথিক প্রথম রেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সাহায্যে এই রেল চালিত হয়েছিল। সর্বশেষ ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টেটিফেনশন প্রথম সফলভাবে ট্রেনের প্রচলন করে ইতিহাসে অমর হয়ে যান। এই ট্রেন ঘণ্টায় ২৪ কি.মি. বেগে প্রথম ৪৫০ জন যাত্রী নিয়ে ইংল্যান্ডের জর্লিংটন থেকে স্টকটনের মধ্যে চলাচল করে। পরবর্তীতে স্টেটিফেনশন রেলপথ নিয়ে কাজ করার জন্য নিজেই একটি কোম্পানি গঠন করেন। পাক-ভারত উপমহাদেশে ভারতে গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসী রেলপথ উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে ১৮৬২ সালে পূর্ববঙ্গের চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেলপথ চালু করে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে। ঐ সময় বিলেতে সিলেটের শ্রীমঙ্গলের সুরভিত চা’য়ের কদর বাড়তে থাকে। বিলেতের ধর্ণাঢ্য ও সৌখিনদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা সুরভিত চা’য়ের স্বাদ ইংরেজদের সুলভে তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়। ইংরেজ ব্যবসায়ীরা নতুন দিগন্ত খুঁজে পায়। চা পরিবহন ও রপ্তানির সুবিধার জন্য তারা বেছে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর। ঐতিহাসিক কাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানগত ও পশ্চাদপদ সুযোগ সুবিধা এই ধারণাকে আরও ত্বরান্বিত করে। আসাম ও শ্রীহট্টের সুরভিত চা-পাতা রপ্তানির জন্য আসামের ডিব্রæগড় থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হয়। গঠিত হয় ১৮৯২ সালে আসমান বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি। তারা চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি জেটি নির্মাণ করে। চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানা চলে যায় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানির হাতে। আসাম থেকে প্রথম চা-পাতার চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। সেই থেকে আধুনিক চট্টগ্রাম বন্দরের গোড়াপত্তনের সূচনা হয়। এই রেলপথ ঘিরে পূর্ববঙ্গে ছোট ছোট শহর ও ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠে। তাই বলা যায়, পূর্ববঙ্গ উন্নয়নের সাথে আসাম বেঙ্গল রেলপথের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে তা সমগ্র বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত হবে। ফলে পশ্চাদপদ চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধার কারণে গোটা বাংলাদেশের অবকাঠামো বদলে যাবে। বদলে যাবে দেশের আর্থসামাজিক কাঠামো। সাথে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল। কর্ণফুলীর তলদেশে বাংলাদেশের প্রথম ট্যানেল। বলা যেতে পারে যোগাযোগের নয়া দিগন্তে পৌঁছে যাবে চট্টগ্রাম-তথা বাংলাদেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ নউত্থানের অপেক্ষার চট্টগ্রাম একটি কসমোপলিটান নগরী। পাহাড় টিলা নদী সাগর ও বন্দরের অপূর্ব মেল বন্দরের সাথে যুক্ত হবে এই রেলপথ। ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনের সুযোগ সুবিধা বহুল পরিমাণে বেড়ে যাবে। চট্টগ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এই রেলপথ প্রভূত প্রভাব ফেলবে নিঃসন্দেহে। ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ট্যানেল উদ্বোধন করেছেন। আমরা অপেক্ষায় আছি চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের। ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব)