রেলওয়ের এক পদের বিপরীতে ৬০৮ প্রার্থী!

25

রাহুল দাশ নয়ন

২০১৬ সালের আলোচিত এএসএম নিয়োগের পাঁচ বছরের মাথায় আবারো সহকারী স্টেশন মাস্টার (এএসএম) পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে রেলওয়ে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে আগামী শনিবার (৬ আগস্ট) বিকালে সারাদেশের ২৯৮টি কেন্দ্রে একযোগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৫৬০ পদের বিপরীতে প্রায় তিন লক্ষ ৪০ হাজার ৫৩১ জন প্রার্থী পরীক্ষা দিবেন। অর্থাৎ প্রতি পদের বিপরীতে লড়বেন ৬০৮ জন প্রার্থী। চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৬টি কেন্দ্রে ৫৬ হাজার ৩৫৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিবেন। ইতোমধ্যে সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগে ২৯৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে আসনবিন্যাস চূড়ান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় নির্বাচন ও পদোন্নতি কমিটির আহব্বায়ক এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘সহকারী স্টেশন মাস্টার পরীক্ষার জন্য সারাদেশের ২৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র বানানো হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আসনবিন্যাসও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য আবেদনকারীদের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দেশনাবলী প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে যাবতীয় নিয়মকানুন তুলে ধরা হয়েছে। ধারণা করছি সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং যোগ্য প্রার্থীরাই উত্তীর্ণ হবেন।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট ২৩৫টি সহকারী স্টেশন মাস্টার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। পরবর্তীতে দুইদফা সংশোধন শেষে গত ৪ নভেম্বর পদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৬০টি করা হয়। গত বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এসব পদে অনলাইনে আবেদন জমা নেয়া হয়।
জানা যায়, ঢাকা বিভাগের ১৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ৬২ হাজার ২২৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৩১টি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৪১৯ জন, রাজশাহী বিভাগের ৪০টি কেন্দ্রে ৩৯ হাজার ৬৮৫ জন, বরিশাল বিভাগের ২৩টি কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৩০৪ জন, সিলেট বিভাগের ১৩টি কেন্দ্রে ১০ হাজার ৫১২ জন, খুলনা বিভাগের ৪৭টি কেন্দ্রে ৪৮ হাজার ৯০ জন, রাজশাহী বিভাগের আওতায় বগুড়ার ১৯টি কেন্দ্রে ২০ হাজার ১৩৯ জন, চট্টগ্রামের ৪৬টি কেন্দ্রে ৫৬ হাজার ৩৫৬ জন ও রংপুর বিভাগের ৬১টি কেন্দ্রে ৫২ হাজার ৭৯৭ জন পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। সারাদেশের ২৯৮টি কেন্দ্রে তিন লক্ষ ৪০ হাজার ৫৩১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন।
বরাবরের মতো এ পদেও ১৫ ভাগ মেধা, ৪০ শতাংশ পোষ্য এবং ৪৫ শতাংশ অন্যান্য কোটায় নিয়োগ হবে। কোটার ৮৫ শতাংশের মধ্যে ৪০ শতাংশ রেলওয়ের পোষ্য কোটা, অবশিষ্ট ৪৫ শতাংশ আনসার ও ভিডিপি, প্রতিবন্ধী ও এতিম, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জেলা এবং নারী কোটায় নিয়োগ হবে। ৪৫ শতাংশ অন্যান্য কোটা নিয়ে আলোচনা না থাকলেও রেলওয়ের ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটার নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ২৭০ পদের সহকারী স্টেশন মাস্টার (এএসএম) নিয়োগেও পোষ্য কোটার অযুহাতে বড়ধরনের অনিয়ম হয়েছে। সেবার ঈদের বন্ধে অনেকটা চুপিসারে ২৫৭ জন উত্তীর্ণ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছিল নিয়োগ কমিটি। যা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে। সেসময় নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা কোটা মানা হয়নি। লিখিত পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পেয়েও চাকরি হয়নি অধিকাংশ প্রার্থীর। অথচ লিখিত পরীক্ষায় নাম্বার কম পাওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ হয়েছিল সেসময়। তাই এবারও নিয়োগে অনিয়মের শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও রেলওয়ের এবারের এএসএম নিয়োগ কমিটিতে আহব্বায়ক হিসেবে রেলের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে রাখা হলেও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, অতীতে রেলের এএসএম নিয়োগে সবচেয়ে বেশি তদবির পূর্বাঞ্চল থেকেই হচ্ছে। রাজনীতিবিদ, শ্রমিক লীগের নেতারাও পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে সুপারিশ করছেন। লিখিত পরীক্ষার পর এই চাপ আরো বাড়বে। যদিও নিয়োগের সবকিছু মন্ত্রণালয় থেকেই চূড়ান্ত হবে। সেখানেই বেশি তৎপর নিয়োগ প্রত্যাশীরা।
এদিকে অনিয়ম-দুর্নীতির শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রেলে লোকবল নিয়োগে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। দ্রæত নিয়োগ শেষ করা হবে। লোকবলের অভাবে ট্রেন পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছে। রেলে ১৫ হাজার পদে নিয়োগ দেয়া হবে। রাজনীতিবিদদের সুপারিশ আসতেই পারে। এক্ষেত্রে চাকরি হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে। রেলের কেউ দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’