রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারত-পাকিস্তান পরস্পর বিরোধী অবস্থানে

21

পূর্বদেশ ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা কারো অজানা নয়। সব ক্ষেত্রেই এক পক্ষ ডানে গেলে আরেক পক্ষ যায় বামে। অনেক ইস্যুতে দুই পক্ষকে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিতে দেখা গেছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান নিয়ে শুরুতে অনেকটা একই সুরে কথা বলে ভারত ও পাকিস্তান। উভয় দেশই সরাসরি রুশ আগ্রাসনের প্রতিবাদ না করে শুধু শান্তি বজায় রাখার কথাই বলে।
তবে বর্তমানে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে পাকিস্তান। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘বিশাল ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশটির সেনাপ্রধান। গতকাল শনিবার জাভেদ বাজওয়া ইসলামাবাদে নিরাপত্তা বৈঠকে ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে পাকিস্তানের গভীর উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, একটি ছোট দেশের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন ক্ষমা করা যায় না।
এদিকে সহিংসতা বন্ধের আহব্বান জানিয়ে আসলেও স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার মিত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট দানে বিরত ছিল ভারত। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত, তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার অব্যাহত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল নয়াদিল্লি। পাকিস্তান পক্ষ পরিবর্তন করলেও ভারত তাদের আগের অবস্থানেই আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে কয়েক দশকের কূটনৈতিক সহযোগিতা এড়িয়ে যাওয়াটা ভারতের জন্য বেশ কঠিন। কাশ্মীর প্রশ্নে জাতিসংঘে ভেটো দিয়ে ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল মস্কো। তাই আলোচনায় সংকট সমাধানের পক্ষেই জোর দিচ্ছে দিল্লি। তারা আরো বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে ভারতের অবস্থানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অতীত কৌশলই বেছে নিয়েছে দিল্লি। ইউক্রেনে যা ঘটছে, তাতে দিল্লির খুশি হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তাই বলে অবস্থান বদলের কোনো সম্ভাবনাও নেই।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রথম থেকেই ভারত জানিয়েছিল তারা ‘হিংসা বন্ধ করে আলোচনার পক্ষে।’ এমনকী দুই দেশের সংঘাত নিয়ে একাধিকবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছিল বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ। তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও পাকিস্তানের আচরণ ছিল কিছুটা ভিন্ন। সেসময় ইউক্রেন নিয়ে চলমান উত্তেজনা কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয় ভারত ও পাকিস্তান। তবে সহিংসতার দায় রাশিয়ার ওপর চাপানোর বিষয়টি সাবধানতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছে তারা।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের দেওয়া নানা বিবৃতির যে ভাষা, তার মিল ছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে ভারতের অবস্থান এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলাপচারিতার সঙ্গে। দুই দেশই জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ছিল।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর দিনই রাশিয়া সফরে যান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে গ্যাস পাইপলাইনের একটি প্রকল্প নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা হয় তাঁর। পাশাপাশি আফগানিস্তানসহ আঞ্চলিক নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান গতকালের বক্তব্যে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও লড়াই বন্ধের আহব্বান ধারাবাহিকভাবে জানিয়ে আসছে। জাভেদ আরও বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন খুবই দুর্ভাগ্যজনক কারণ হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। শরণার্থী হয়েছে লাখ লাখ মানুষ এবং ইউক্রেনের অর্ধেক ধ্বংস হয়েছে।
এছাড়া তিনি বলেছেন, এই সংঘাত ছোট দেশগুলোকে আশা দিয়েছে। কারণ ছোট কিন্তু ‘দক্ষ’ বাহিনী দিয়ে একটি বড় দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে তাদের এলাকা রক্ষা করতে পারবে।

মধ্য ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
এদিকে মধ্য ইউক্রেনের দুই শহরে গতকাল শনিবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এতে শহরের অবকাঠামো ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির পোলতাভা অঞ্চলের প্রধান এই তথ্য জানান।
দিমিত্রি লুনিন এক অনলাইন পোস্টে লিখেছেন, পোলতাভায় রুশ বাহিনীর এক ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামো স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। এছাড়া আরেক শহর ক্রেমেনচুকে গতকাল সকালে বহু হামলা চালানো হয়েছে।
লুনিন বলেন, অন্তত চারটি ক্ষেপণাস্ত্র পোলতাভাতে দুটি অবকাঠামো স্থাপনায় আঘাত করে। অন্য দিকে প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, তিনটি বিমান থেকে ক্রেমেনচুকের শিল্প স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, কিয়েভের পূর্বে অবস্থিত পোলতাভা শহর হচ্ছে পোলতাভা অঞ্চলের রাজধানী এবং ক্রেমেনচুক প্রধান শহরগুলোর একটি।

পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আহব্বান
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এবার ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর কার্লা দেল পন্তে। গতকাল শনিবার আল জাজিরার এক লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দৈনিক লে টেম্পসকে সাক্ষাৎকার দেন কার্লা দেল পন্তে। এ সময় তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আহব্বান জানান।
সাক্ষাৎকারে কার্লা দেল পন্তে বলেন, পুতিন একজন যুদ্ধাপরাধী।
এর আগে গত ১৬ মার্চ পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি তিনি (ভ্লাদিমির পুতিন) একজন যুদ্ধাপরাধী।
বাইডেন পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী’ বলে অভিহিত করার পর, ক্রেমলিন ত্বরিত এক প্রতিক্রিয়ায় একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বাগাডম্বর বলে আখ্যা দেয়। সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা।