রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বেড়েছে দুই-চারগুণ

66

ওয়াসিম আহমেদ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মালিকানাধীন কোনো রাস্তা কাটলে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক কর্তন নীতিমানা-২০১৯’ অনুসারে ক্ষতিপূরণ ফি পরিশোধ করতে হবে। যা আগের তুলনায় দুই থেকে চারগুণ বেশি। এতে সড়ক কর্তন পরবর্তী মেরামত কার্যক্রম চালানো সহজ হবে বলে মনে করছেন চসিক সংশ্লিষ্টরা। গেল সপ্তাহের শেষদিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
তবে নির্ধারিত ফি পরিশোধ এবং নীতিমালা দুটো মেনেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে কাজ করতে হবে। অন্যথায়, ঠিকাদারের মালামাল জব্দ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নগরীতে সবচেয়ে বেশি সড়ক কর্তন করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এমনকি আগামী মাস থেকে ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ করবে সংস্থাটি। এতে ব্যাপক সংখ্যক রাস্তা কাটতে হবে।
এদিকে সড়ক কর্তনের ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদনকে যুগোপযোগী বলে মন্তব্য করেছেন চসিক প্রকৌশলীরা।
চসিক সূত্র জানিয়েছে, এতোদিন ধরে ২০১২ সালে নির্ধারিত সড়ক কর্তনের ফি আদায় করতো চসিক। নতুন অনুমোদনে দেড় মিটার গভীরতার প্রতি বর্গমিটার কাঁচা রাস্তা খননের জন্য ৯৭ টাকা ফি ছিলো, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৮২ টাকা। একই পরিমাণ ব্রিক পেভমেন্ট সড়ক কর্তন ফি ৯৯০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭৯২ টাকা, বিটুমিনাস রাস্তা ৩ হাজার ১৯০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৮৭১ টাকা, সিসি রাস্তা ১ হাজার ৮২৪ টাকা থেকে ৪ হাজার ৯৪৬ টাকা , আরসিসি ২ হাজার ৬২৫ টাকা থেকে ৬ হাজার ৭০৪ টাকা,এনগ্রেড সিসি টাইলস ফুটপাত ১ হাজার ৮৯৮ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩৫৬ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। একইসাথে দেড় মিটারের চেয়ে অধিক গভীরতায় সড়ক কর্তনে প্রতি বর্গমিটার কাঁচা রাস্তা খননের জন্য ৯৭ টাকা থেকে ৪৮২ টাকা, ব্রিক পেভমেন্ট সড়ক ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩৩ টাকা, বিটুমিনাস রাস্তা ৩ হাজার ৩২৫ টাকা থেকে ৯ হাজার ৬১৯ টাকা, সিসি রাস্তা ১ হাজার ৯৬৯ টাকা থেকে ৬ হাজার ১৫১ টাকা , আরসিসি ২ হাজার ৭৭১ টাকা থেকে ৭ হাজার ৯৩০ টাকা, এনগ্রেড সিসি টাইলস ফুটপাত ২ হাজার ৪৪ টাকা থেকে ৪ হাজার ৯৬৮ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
নীতিমালা অনুসারে রাস্তা কাটতে ঠিকাদারকে মানতে হবে ২২টি শর্ত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ হলো, রাস্তা কর্তনের অন্তত তিনদিন আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার, স্থানীয় ক্যাবল অপারেটর ও মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দারের জানাতে হবে, প্রচারণা ছাড়া স্থানীয় থানা পুলিশ, ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে অবহিতকরণ, রাস্তা কাটার কাজ রাতে করতে হবে, খননকৃত মাটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ, খনন শেষে সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত যান চলাচলের উপযোগী রাখতে হবে, কোনোসংস্থার ইউটিলিটি লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ঠিক করে দিতে হবে। তবে সিটি করপোরেশন কোনো কারণ ছাড়াই জনস্বার্থে খনন কাজ স্থগিত বা অনুমোদন বাতিল করার এখতিয়ার রাখে এবং তা বিনা শর্তে খননকাজে নিয়োগকৃত সংস্থাকে মেনে নিতে হবে।
এসব বিষয় নিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা ওয়াসার সাথে সমন্বয় করছি। উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে হবে, জনদুর্ভোগও লাঘব করতে হবে। তবে কিছু ঠিকাদার পানির বাইপাস লাইন দেওয়ার জন্য ইচ্ছেমত সড়ক কর্তন করে। এমন খবর পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সবকিছুর দাম বেড়েছে, রাস্তা কাটলে সেগুলো সিটি করপোরেশনকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয়। এতে যা খরচ হতো এতোদিন সিটি করপোরেশন বহন করতো। নতুন বর্ধিত হারে রেট নির্ধারণের ফলে খনন পরবর্তী মেরামত কাজগুলো ঠিকমত করা যাবে।’