রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দলীয় প্রার্থী বাছাই করবেন প্রধানমন্ত্রী

17

পূর্বদেশ ডেস্ক
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হবেন, তা ঠিক করার ভার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির সংসদীয় কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। রাতে সংসদ ভবনে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সে দায়িত্ব দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দলটির মনোনীত প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত বলা চলে। খবর বিডিনিউজ। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। ৩৫০ আসনের সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য এখন ৩০৫।
টানা দুই বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর মো. আবদুল হামিদ এবার বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছেন। সংবিধান অনুযায়ী, দুই বারের বেশি রাষ্ট্রপ্রধানের পদে থাকার সুযোগ নেই। তার উত্তরসূরি নির্বাচনে আগামী ১৯ ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১২ ফেব্রæয়ারি। সেই নির্বাচনে সামনে রেখে গতকাল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল সভায় বসল। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভায় সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীসহ সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঠিক করতে শেখ হাসিনার হাতে সময় রয়েছে পাঁচ দিন।
এদিকে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে কয়েকজনের নাম কিছু দিন ধরেই সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নাম।
সংসদ উপনেতা হওয়ার আগে মতিয়ার চৌধুরীর নামও এসেছিল আলোচনায়। আলোচনায় ছিল ওবায়দুল কাদেরের নামও। নিজের নাম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের এর আগে বলেছিলেন, ওই পদে বসার ‘যোগ্যতা আমার নেই’। গতকাল সকালে এক অনুষ্ঠানেও রাষ্ট্রপতি প্রার্থী নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তিনি। প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে কি না- সেই প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এর কোনোটাই জানি না। আজকে (মঙ্গলবার) সংসদীয় দলের বৈঠকে এই বিষয়ে প্রস্তাব আসতে পারে। এই বিষয়ে আমাদের সংসদীয় দল এজেন্ডা অনুযায়ী হয়ত আলোচনা করবে। বৈঠক পর্যন্ত আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। আর আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠকেই সব কিছু হয়ে যাবে, এটা এমনও নয়। ১৯ তারিখে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, তার আগে পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে এবং এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা চিন্তা ভাবনা করছেন। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) তাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ২১ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে নতুন রাষ্ট্রপতি হবেন এই পদে অষ্টাদশ ব্যক্তি। সভায় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দলী সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে এবং গত ১৪ বছরে তার সরকারের করা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ তুলে ধরার পরামর্শ দেন।
আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন। সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভায় বক্তব্য রাখেন।