রাষ্ট্রনেতাদের চুরি করা অর্থ শরণার্থীর কল্যাণে ব্যয়ের আহ্বান

50

দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রনেতাদের জব্দকৃত অবৈধ অর্থ শরণার্থী কল্যাণে ব্যয়ের জোরালো দাবি তুলেছে বিশ্ব শরণার্থী পরিষদ (ওয়ার্ল্ড রিফিউজি কাউন্সিল)। বিশ্বব্যাংকে উদ্ধৃত করে তারা বলছে, এরমধ্যে ১৫০০ থেকে ২০০০ কোটি ডলার জব্দ করে ব্যাংকে রাখা হয়েছে। জব্দকৃত অর্থকে শরণার্থী কল্যাণে ব্যবহারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত হওয়া মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৮৫ লাখ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সর্বোচ্চ সংখ্যা এটি। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তহবিল মূলত স্বেচ্ছা অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি সতর্ক করেছেন, তাদের তহবিল ফুরিয়ে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার অ্যা কল টু অ্যাকশন : ট্রান্সফর্মিং দ্য গ্লোবাল রিফিউজি সিস্টেম শিরোনামে ২১৮ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে শরণার্থী পরিষদ। ওই প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে সংঘাত, নিপীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যূতি ও শরণার্থী পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান সংকট নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
২৪ সদস্যবিশিষ্ট বিশ্ব শরণার্থী পরিষদ গঠিত হয় ২০১৭ সালের মে মাসে। কানাডার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লয়েড অ্যাক্সওয়ার্থি এর সভাপতি। অ্যাক্সওয়ার্থি বিশ্বব্যাংকের সম্ভাব্য পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের চুরি করা বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে জব্দকৃত অবস্থায় ব্যাংকে রয়েছে ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার।
সাধারণত দেশে অবৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থের সুরক্ষায় তা ভিন্ন দেশের ব্যাংকে জমা রাখে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা। জব্দকৃত অর্থ কালো টাকা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তা লেনদেন করা যায় না। তবে অ্যাক্সওয়ার্থি প্রস্তাব দিয়েছেন, শরণার্থী কল্যাণে ব্যায়ের স্বার্থে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট আইন অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এ অর্থ পুনঃবণ্টনের পথ করে দিতে পারে। কিভাবে এ টাকা উদ্ধার করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কতগুলো দেশ ও সরকার আইন পাস করে তাদের আদালতকে বাজেয়াপ্ত অর্থ পুনঃবণ্টন করার এখতিয়ার দেবে তার উপরই পুরো বিষয় নির্ভর করছে।
বিশ্ব শরণার্থী পরিষদের প্রতিবেদনে বলা হয়, শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যূত হয়ে পড়া মানুষদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বিশ্বে তারাই সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে আছে। শরণার্থী পরিষদ মনে করে শরণার্থী নারী ও শিশুদেরকে বাজেয়াপ্ত সে অর্থ দিয়ে বেশি করে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।
১৪ বছরে ৫৩৫টি
বড় নৌ দুর্ঘটনা
বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে ৫৩৫টি বড় নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ছয় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে হিসাব জানিয়েছে নদী নিরাপত্তা বিষয়ক সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘নদী বাঁচান, দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান’ বিষয়ে এক মানববন্ধনে এইসব তথ্য জানান নোঙরের সভাপতি সুমন শামস। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
তিনি বলেন, ‘নোঙরের হিসাব অনুযায়ী ১৪ বছরে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫৩৫টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ছয় হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এসব দুর্ঘটনা তদন্তে ৮৬৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির কোনোটিরই ফলাফল প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। এছাড়া নৌপথের যানবাহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তেমন কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে নৌপথ তার গতিপথ হারিয়ে প্রায় এখনও ঘটছে ছোট বড় লঞ্চ দুর্ঘটনা। ১৫ জানুয়ারি দিবাগত গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে একটি তেল বোঝাই কার্গোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি ট্রলার ডুবে যায়। মাটি বোঝাই ট্রলারটিতে ৩৪ জন শ্রমিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বাকি ২০ জনের ১৮ জনকেই এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুমন শামস বলেন, ‘নদীমাতৃক দেশের নদীরা আজ ভালো নেই। বিপর্যয় নেমে এসেছে আমাদের বেশিরভাগ নদীতে। আমাদের অনুসন্ধান বলছে, তেরশ’ নদীর এখন জীবিত আছে মাত্র ২৩০টি নদী। উজান দেশের উদাসীনতায় ভাটির দেশের পানি কমে যাওয়ায়, আজ আমাদের নদীগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে। দেশের চল্লিশটির নদীতে কমে গেছে পানি, ভয়াবহ পানি সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে নদীমাতৃক বাংলাদেশ।’
তিনি জানান, প্রতিবছর দেশের নদীতে গড়ে জমা পড়ছে ৪ কোটি টন পলি। ফলে নৌপথ ছোট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ৪৮ বছরের নৌপথের দৈর্ঘ্য কমেছে ১৯ হাজার কিলোমিটার। খননে পরে পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ অন্যান্য নদীগুলো এখন ধুধু বালুচর। এছাড়া দেশজুড়ে অব্যাহত রয়েছে নদী দখল ও দূষণ। ফলে কৃষি, জনস্বাস্থ্য, প্রাণী ও উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়েছে।