রাজার টেনশনে শাহজাদা

72

রাহুল দাশ নয়ন

নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরেই কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষা উপজেলা বোয়ালখালী। ১৯৮৩ সালে ঘোষিত এই উপজেলাটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ। শহরতলীর কাছে হওয়ায় ভৌগলিকগত ভাবেই এই উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ। ১৩৭ দশমিক ২৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলাটিতে বর্তমানে নির্বাচনী আমেজ তুঙ্গে। আসছে ১৬ মার্চ এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন রেজাউল করিম (নৌকা), এসএম মিজানুর রহমান (আনারস) ও আয়েশা ফারজানা (দোয়াত কলম)।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম প্রকাশ রাজা মিয়ার সাথে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম মিজানুর রহমান প্রকাশ শাহজাদার প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। রেজাউল করিম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শাহজাদা মিজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক। বোয়ালখালীর ভোটে রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছে আঞ্চলিকতা। যে প্রার্থীর অধীনে এলাকা বেশি তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করছেন ভোটাররা।
কয়েকটি ইউনিয়নের ভোটাররা জানান, একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রাম নিয়ে গঠিত বোয়ালখালী উপজেলা। কর্ণফুলী নদীর তীর ও পাহাড় ঘেঁষা শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিমের বাড়ি। কালুরঘাট সেতু পার হলেই পৌরসদরের কধুরখীলে বাড়ি মিজানুর রহমানের। দুই প্রার্থীর বাড়ি দুই ইউনিয়নে হলেও ভৌগলিকগত কারণে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন মিজান। আবার দলীয় প্রার্থী হওয়ায় রাজা মিয়ার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছে আওয়ামী লীগ। এতদিন দ্বিধাবিভক্ত থাকা আওয়ামী লীগের দুটি অংশই রাজা মিয়ার পক্ষে মাঠে নেমেছে। তবে মিজানের পক্ষেও গোপনে একটি পক্ষ কাজ করছে বলে গুঞ্জন আছে। যদিও পক্ষটিকে প্রকাশ্যে মিজানের হয়ে প্রচারণায় দেখা যায়নি। আবার রাজা মিয়ার পক্ষে যেসব নেতা মাঠে আছেন তাদের বেশিরভাগই চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। অতীত রাজনীতির গ্রুপিংয়ের প্রভাব ভোটে পড়লে হিসেব পাল্টে যেতে পারে। এখন শাহজাদা মিজানকে নিয়েই রাজা মিয়ার যত টেনশন।
পৌরসভা এলাকার ভোটার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দৃশ্যপটে আঞ্চলিকতা হিসেব করলে মিজানের অবস্থা ভালো। আবার দলীয় হিসেব ও নেতাদের তৎপরতাকে বিবেচনায় নিলে রাজা মিয়াই হবেন চেয়ারম্যান। পৌরসভাসহ উপজেলা সদরের কাছাকাছি যেসব ইউনিয়ন আছে সেগুলোতে ভোট যিনি বেশি পাবেন তিনিই চেয়ারম্যান হবেন। তবে মিজানকে বসিয়ে দিতে পারলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য ভালো হতো।
নির্বাচনের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিমকে তিনবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল আমিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রার্থী ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী পরিবেশও সুষ্ঠু আছে। সকল স্তরের নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীকে বারবার সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছি। তার ভবিষ্যত আছে। যদিও আমরা তাকে নিয়ে কোনো টেনশন করছি না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলেই আশা করছি। আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবো। তার সাথে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে দেখছি না। এরপরেও কেউ গোপনে আঁতাত করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে এর খেসারত দিতে হবে।’
আনারস প্রতীকের প্রার্থী এস.এম মিজানুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি বোয়ালখালীবাসীকে নতুন নির্বাচন উপহার দিব। প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ভালোভাবেই সাড়া পাচ্ছি। আমি বোয়ালখালীর সর্বস্তরের মানুষের জন্য আর্শীবাদ। দলীয় প্রার্থী যে এলাকার বাসিন্দা সেটাকে অনেকেই ছিটমহলের সাথে তুলনা করছেন। বোয়ালখালীর মানুষ নতুন স্লোগান তুলেছে আমরা ছিটমহলের বাসিন্দা হতে চাই না। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের দলীয় পরিচয় লাগে না। আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্লাটুন কমান্ডারের ছেলে। আমি দলের বোঝা নয়, সম্পদ হতে চাই। আমাদের লোকজনকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিবে কিংবা আগের রাতেই কেন্দ্র দখলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই জিতবো।’
প্রসঙ্গত, বোয়ালখালীর ৮৬টি ভোটকেন্দ্রের ৫১৮টি কক্ষে এক লক্ষ ৯১ হাজার ৭২৮ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লক্ষ ৫৭৫ জন ও মহিলা ভোটার ৯১ হাজার ১৫৩ জন। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল আলমের মৃত্যুতে শূন্যপদে উপনির্বাচন হচ্ছে।