রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে ব্যয় বৃদ্ধির চিন্তায় এগিয়ে

12

এম এ হোসাইন

আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে চলতি জানুয়ারি থেকে ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এই দাম বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর প্রতি মনোযোগী হলেও এখন তাতে দায়সারা ভাব দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার কারণে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। তবে নির্ধারিত লক্ষমাত্রা থেকে রাজস্ব আদায়ে অনেক পিছিয়ে থেকেও ব্যয় বাড়ানোর চিন্তা করছে সংস্থাটি।
অর্থবছরের শুরুতে গত জুলাই মাসে চট্টগ্রাম ওয়াসা গ্রাহকের মোট বিল করে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ ৮ হাজার ৮৯৫ টাকা। একই মাসে বিলের বিপরীতে পূর্বের বকেয়াসহ মোট আদায় করেছে ১০ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ২০৮ টাকা। আগস্ট মাসে মোট বিল করা হয় ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩২ টাকা। এই বিলের বিপরীতে পূর্বের বকেয়াসহ আদায় করা হয়েছে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৫ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে মোট বিল হয় ১৫ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৪ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭২ টাকা। অক্টোবরে মোট বিল করা হয়েছে ১৫ কোটি ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮০৮ টাকা। আদায় হয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬ টাকা। নভেম্বর মাসে সব মিলিয়ে মোট বিল করা হয়েছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৪ হাজার ৩৭২ টাকা। এর বিপরীতে পূর্বের বকেয়া আদায় সহ মোট আদায় হয়েছে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ৩৮৫ টাকা। ডিসেম্বর মাসে মোট বিল করা হয়েছে ১৫ কোটি ৭৩ লাখ ২১ হাজার ১৭ টাকা। এ মাসে পূর্বের বকেয়া আদায়সহ মোট আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ২২ হাজার ১০৮ টাকা। প্রতিমাসে বিলের চেয়ে আদায় হয়েছে কম। যার কারণে বিপুল টাকা বকেয়া পড়েছে ওয়াসার।
রাজস্ব আদায়ের এমন ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) ছামসুল আলম বলেন, আমাদের রাজস্ব আদায় ঠিক আছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব আয়ে চলে। রাজস্ব আদায় ঠিক মতো না হলে প্রতিষ্ঠানের এতোকর্মীর বেতন ঠিকভাবে দেয়া সম্ভব হতো না। সাংবাদিকরা ভুল তথ্য লিখছে। আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা সে অনুপাতেই আদায় হচ্ছে।
অবশ্য উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) ছামসুল আলমের কাছে অর্থবছরের ছয়মাসের আদায়ের প্রতিবেদন চাইলে তিনি সে তথ্য জনসংযোগ কর্মকর্তার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে বলেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী নূরজাহান শীলার কাছে গেলে তিনি এ সংক্রান্ত তথ্য তার কাছে পাঠানো হয় না বলে জানান।
বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ছয়মাসে আবাসিক-অনাবাসিকসহ অন্যান্য বিল মিলে মোট ৯২ কোটি ৬৮ লাখ ১০ হাজার ৩২৮ টাকা গ্রাহকের কাছে বিল করা হয়। এর বিপরীতে ওয়াসা আদায় করতে পেরেছে ৮০ কোটি ৪৭ লাখ ১২ হাজার ২৭৪ টাকা। চলতি ২০২১/২০২২ অর্থবছরে ওয়াসার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২২ কোটি ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে প্রথম ছয়মাসে অর্জন হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। গড় হিসাবে এই সময়ের মধ্যে প্রতিমাসে ওয়াসার বিল হয়েছে ১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৬৮ লাখ ৩৮৮ টাকা। আর গড় আদায় হিসাব করলে দেখা যায় প্রতিমাসে আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৭১২ টাকা করে। আবার গত ছয়মাসে ওয়াসা যে বিল করেছে তার মধ্যেও ১২ কোটি ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৫৪ টাকা আদায় করতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, বকেয়া দিন দিন বাড়তেছে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সংকট আছে। রাজস্ব কর্মকর্তাও প্রেষণে আসেন। প্রেষণে কর্মকর্তা আসলে আবার কিছুদিন পর চলে যান। যত দিন ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন ততোদিন আদায়ও ঠিক থাকে। ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কোনো সংযোগ বিচ্ছিন্নও করা যায় না। আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়া পড়তো, এখন ব্যক্তি গ্রাহকদেরও বকেয়া পড়ছে। রাজস্ব আদায় সহজ করতে আমরা সকল সুবিধার ব্যবস্থা করেছি। এখন তো ঘরে বসেই বিল দেয়া যাচ্ছে। তারপরও বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে।
ওয়াসা ২০২১-২২ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরে ২২২ কোটি ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং মোট রাজস্ব ব্যয় ধরা হয় ১৮৮ কোটি ৪৫ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। এতে প্রস্তাবিত মোট লাভ দেখানো হয়েছে ৩৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯ হাজার টাকা। তাছাড়া সর্বমোট রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বমোট রাজস্ব ও মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। মূলধন ব্যয়সহ বাজেটে নীট লাভের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা।
রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে থাকলেও খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ নেই ওয়াসার। উল্টো এমডির বেতন বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব আছে সংস্থাটির।