রাজস্থলীতে দুই দলের বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত, এলাকায় আতংক

5

রাঙামাটি প্রতিনিধি

তিনদিন আগে রাঙামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় পিতা-পুত্রসহ ৩ গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল অস্ত্রধারীরা। এর রেশ না কাটতেই এবার জেলার রাজস্থলীতে একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। খুনের শিকার অভিষেক চাকমা (৩৫) পাহাড়ের আঞ্চলিক দল সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) স্থানীয় কমান্ডার বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। হত্যাকান্ডের জন্য মগ লিবারেশন পার্টির (এমএলপি) দিকেই অভিযোগ স্থানীয়দের। অবশ্য এ বিষয়ে সংগঠনটির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার গাইন্দা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ওগাড়ি পাড়ায় বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে জেএসএস ও মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) সন্ত্রাসীরা। এতে অভিষেক চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গতকাল শনিবার তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে রাজস্থলী থানা পুলিশ। তবে নিহতের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে জেএসএস। এ ঘটনায় বর্তমানে দু’দলই মুখোমুখী অবস্থানে আছে। এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একদল সন্ত্রাসী বিলাইছড়ির বড়থলি সাইজাম পাড়ায় এসে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে পিতা-পুত্রসহ ৩ গ্রামবাসী নিহত হন। অনেকে আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন বিশ্ব চন্দ্র ত্রিপুরা (৫৮), তার ছেলে সুবাশ ত্রিপুরা (২৫) ও চিতারাং ত্রিপুরা (৬৫)।
হামলা ও হত্যাকান্ডের পর নিজেদের বীরত্ব প্রচার করতে পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) তাদের ফেসবুক পেজে তিনজনকে হত্যার কথা স্বীকার করে পোস্ট দিয়েছে।
নিহতদের ‘নিরীহ গ্রামবাসী’ এবং হত্যাকান্ডের জন্য কুকি-চিন পার্টিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। জেএসএস সদস্যদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ তুলে গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে কেএনএফ’র দাবি, নিহতরা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর সদস্য। জেএসএসের ক্যাম্পে হামলা করে কুকি-চিন সফল হয়েছে দাবি করা হয় পেজে। অবশ্য জেএসএস এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
রাজস্থলীতে শুক্রবারের বন্দুকযুদ্ধ ও হত্যাকান্ডের বিষয়ে থানার (ওসি) জাকির হাসাইন জানান, উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আঞ্চলিক সংগঠনের দুই দলের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত একজনর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সদস্য বল ধারণা করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শান্তনু কুমার দাশ বলেন, গত শুক্রবার রাতে দুইপক্ষের মধ্য এই গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। রাজস্থলী থানা পুলিশ সকাল ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে।
এ ব্যাপারে জেএসএস রাঙামাটি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা জানিয়েছেন রাজস্থলীতে তাদের কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। তাদের কোন স্বশস্ত্র দল নেই। জেএসএসের কোন সদস্য নিহতের খবর আমার কাছে নেই।
গ্রামবাসীর ওপর হামলা ও হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে বড়থলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতোমং মারমা স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলেন, ‘গত ৬ জুন সাইজাম পাড়ায় জেএসএস ও কুকি চীন দলের মধ্যে সংঘাত হয়। এতে কুকি চীন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য সাইজাম পাড়ার ত্রিপুরাদের দায়ী করে কুকি-চিন পার্টি। এ ঘটনার পর সাইজাম পাড়াবাসীকে গ্রাম থেকে চলে যেতে হুমকি দেয় কুকি-চিন পার্টি।’