রাজশাহীতে একই লাইনে দুই ট্রেন মুখোমুখি

17

পূর্বদেশ ডেস্ক

মীরসরাই ট্রাজেডি ভুলতে না ভুলতেই আরো একটি বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন রাজশাহীর ডেমু ট্রেনের যাত্রীরা। তবে মীরসরাই ট্রাজেডির আলোচিত রেল মহানগর প্রভাতির চাকায় পিষ্ট হয়ে গতকাল সোমবারও একজনের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়েছে মীরসরাইয়ে।
গতকাল সোমবার রাজশাহীতে একই লাইনে মুখোমুখি দুই ট্রেন সংঘর্ষ হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানা গেছে, রাজশাহীর সিতলাই রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় একই লাইনে ঢুকে পড়ে দু’টি ট্রেন। তবে শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ট্রেন দু’টি। গতি কম থাকায় সংঘর্ষের আগেই দুই চালক ট্রেন থামিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। সকাল পৌনে ১০ টার দিকে রাজশাহী-রহনপুর রুটে এ ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের যেমন ভাবিয়ে তুলেছে, ট্রেন যাত্রায়ও বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। এদিকে হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, মীরসরাই রেল ক্রসিংয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং পরে হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামে যান তিনি। গতকাল সোমাবার সকালে তিনি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ওই গ্রামে নিহত ছাত্র-শিক্ষকদের শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন। ওই সময় তাকে ঘিরে এলাকার শোকে বিহব্বল গ্রামের উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করে ছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় তিনি উপস্থিত স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, এখানে আসার পর যে পরিস্থিতি মানুষের মুখ থেকে শুনেছি, শোক সইবার মত পরিস্থিতি এখানে সবার নাই। শোকাহত হওয়ার আসলে কিছু নাই, শোকটাকে শক্তি বানানোর সময় আসছে। যাদের সাথে কথা বলেছি তারা কোনো একটা সিস্টেম বা কোনো ছলনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আজকে যারা ভুক্তভোগী হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণের বদলে সাপোর্টের বিপরীতে উল্টোভাবে দোষী করা হয়েছে। তিনি রেলওয়ে ব্রিটিশ আইন দ্বারা পরিচালিত জানিয়ে বলেন, তাদের (রেলওয়ের) নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে সে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না। কেন তারা একটা পরিবারের সাথে এমন মজা করবে। ব্রিটিশরা চলে গেছে আজ থেকে কত বছর আগে; কিন্তু রেখে গেছে তাদের সেই নিয়মগুলো তথা মজাগুলো। যার সুযোগ নিচ্ছে কতগুলো দুর্নীতিবাজ-সিন্ডিকেট-কালোবাজারীরা; সুবিধা হাসিল করছে তারা। দোষি করছে এই ধরনের সাধারণ কিছু পরিবারের সদস্যদেরকে।
তিনি এই ঘটনার সুবিচারের পাশাপাশি রেলের একের পর এক ঘটনায় নিজের শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের ছয় দফা দাবি নিয়ে কাজ করছি। এতে আমার শিক্ষার্থী ভাইদের হত্যার এই বিষয়টি যুক্ত করবো। শুরুর দিকে আমি কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করেছি। এখন আমি সারা দেশে গণসংযোগ ও জনসচেতনতা করে বেড়াচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭ টায় হাটহাজারীর খন্দকিয়া গ্রামের আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৬ জন একটি মাইক্রোবাসে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় ঘুরতে যান। ঘোরাঘুরি শেষে ফেরার পথে দুপুর পৌনে ২ টার দিকে বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। আহত হন আরও ৭ জন। তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।