রাজপথে নামে ছাত্রসমাজ

12

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যে ঘটনা বিশ্বাবাসীকে স্তম্ভিত করেছিল, তারও পূর্ব ইতিহাস ছিল। ১৯৪৭ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষ ভেঙে মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলোর সমন্বয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা হলেও শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসকচক্রের বৈষম্যমূলক নীতির শিকার হয়। অধিকাংশ মানুষের মুখের ভাষা হওয়া সত্তে¡ও বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার হীন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পাকিস্তানের জনক বলে কথিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৭ সালের ২১ মার্চ কার্জন হলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষারূপে ঘোষণা দেন এবং প্রবল প্রতিবাদের মুখে পতিত হন। এরপর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রসমাজের জোর প্রতিবাদে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-ধর্মঘট, ১১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী প্রস্তুতি দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশের সর্বত্র ধর্মঘট আহবান করা হয়। গণআন্দোলনের উত্তাল রূপ দেখে কর্তৃপক্ষ আতঙ্কিত হলো, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকায় জারি হলো ১৪৪ ধারা।
এদেশের প্রগতিশীল চেতনার ও আন্দোলনের পুরোধা ছাত্রসমাজ ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে নামল। গ্রেপ্তার, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস এবং অবশেষে গুলি। অগণিত মানুষ আহত, শহীদের সংখ্যাও কম নয়। অনেকের লাশ গুম করে দিল কর্তৃপক্ষ। যাদের পরিচয় উদ্ঘাটিত হলো, তারা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আদর্শ ও ত্যাগের প্রতিমূর্তি হয়ে বেঁচে রইলেন। সালাম-রফিক-জাব্বার-বরকতের রক্তে পূর্ব বাংলার পলিমাটিতে জন্ম নিল নতুন অধ্যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সীমা পেরিয়ে নবপর্বের সূচনা করল। ১৯৯৯ সালে এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়।