রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের ফুটবলের মতো ব্যবহার করছে

41

বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের ফুটবলের মতো ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বিদিশা এরশাদ। গতকাল দুপুরে নগরীর লেডিস ক্লাবে ‘জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চট্টগ্রাম’-এর আয়োজনে দলটির নেতাকর্মীসহ সুধীজনদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদিশা এরশাদ সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার বলেছিল, এবার পূজার সময় কোনো অঘটন হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষকে ভরসা দিয়েছিলেন। এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি, উনি অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। কিন্তু এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাধারণ মানুষের কাছে ছোট করল কে? পুলিশ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। তা না হলে কুমিল্লার ঘটনার পরে কেন আবার একই ঘটনা নানা জায়গায় পুনরাবৃত্তি হলো? রংপুরে হলো, ফেনীতে হলো, একের পর এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। পুলিশ কেন সতর্ক হলো না, প্রশাসন কেন সতর্ক হলো না?’ ‘এর কারণ একটাই, রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। না পারছে সরকারি দল, না পারছে বিরোধী দল। আর জাতীয় পার্টির তো প্রশ্নই আসছে না। জাতীয় পার্টি ঢাকায় বসে বসে ফেসবুকে বিবৃতি দেয়। এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে যত হামলা হয়েছে সবই রাজনৈতিক হামলা,সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। রাজনৈতিক কারণে হামলা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের ফুটবলের মতো ব্যবহার করছে। ভোটের সময় শুধু তাদের ব্যবহার করা হয়।’
এরশাদের শাসনামলের প্রসঙ্গ টেনে বিদিশা বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের জন্য যদি ভালো কিছু কেউ করে থাকে, সেটি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে হয়েছে। দাঙ্গাজনিত কারণে রাজধানীতে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা বের হতো না একসময়। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দেশ পরিচালনায় আসার পর ১৯৮৯ সালে প্রথম জন্মাষ্টমীর আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। সেই থেকে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা প্রতিবছর উৎসবমুখর পরিবেশে বের হচ্ছে। পল্লীবন্ধু জন্মাষ্টমীর দিনকে শুভদিন ঘোষণা করেছিলেন, সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। পল্লীবন্ধু হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন। এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গাপূজার সময় সেই ট্রাস্টে তিন কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।’
‘মন্দির নির্মাণ ও সংস্কারে পল্লীবন্ধুর সহযোগিতা ছিল সর্বজনবিদিত। তিনি মসজিদের পাশাপাশি মন্দিরের বিদ্যুৎ বিলও মওকুফ করেছিলেন। আমি দেখেছি, উনি কী ভাবতেন। তিনি বিভিন্ন কিছু আমার সঙ্গে শেয়ার করতেন। তিনি প্রাদেশিক সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অনেক স্বপ্ন তার ছিল,’ বলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাবেক এই স্ত্রী। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের সমালোচনা করে বিদিশা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এমন একটি পার্টি, যেখানে মতপ্রকাশ করা যায় না। স্বার্থবাজ, ধান্ধাবাজ কিছু লোকজন সবসময় এই পার্টিকে কব্জা করে রাখে। তাদের কবল থেকে এই পার্টিকে বের করে আনতে হবে। জাতীয় পার্টিকে জনগণের দলে পরিণত করতে হবে। আমি জাতীয় পার্টিকে জনগণের দলে পরিণত করতে চাই। এজন্য আমি জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছি।’
দলটির চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখানে আমি কোনো জনসভা করতে আসিনি। জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা, সমর্থকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আমাকে ভুলে যাননি, এতে আমি আনন্দিত।’ ‘মুসলিম ভাইয়েরা, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র করেছেন। কিন্তু প্রত্যেক হিন্দু ভাইদের দেখে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। একজন হিন্দু ভাইয়ের পাশে ১০ জন মুসলমান ভাই ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে তাদের দেখে রাখবেন,’ বলেন বিদিশা এরশাদ।
জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক আসিফ আহমেদ মৃধার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মো. মামুনুর রশীদ, সাবেক মন্ত্রী ও বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার যুগ্ম মহাসচিব সাবেক সাংসদ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, কাজী রুবায়েত হাসান, সিকদার আনিসুর রহমান, শোয়েব আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, এম এ জে ওয়াদুদ দীদার, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মানবিক পার্টির চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন, জাপা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় সদস্য জিয়াউল হক সরকার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাফিজ মাহবুব, দফতর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী, সদস্য লুৎফুল গনি টিটু, কাজী ইউসুফ আলী চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার আলম, হাফসা সুলতানা স্মৃতি, শেখ রুনা, জুলিয়া আক্তার মীরা ও শারমিন নিপা। বিজ্ঞপ্তি