রাজধানীতে এরশাদকে শেষ শ্রদ্ধা নেতাকর্মীদের

30

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় জানাজা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হয়েছে। গতকাল সোমবার বাদ আসর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তার এই জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররমের খতিব মিজানুর রহমান।
পরে জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এরশাদ জীবনে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করে কষ্ট দিয়ে থাকলে, তা ক্ষমা করার অনুরোধ জানান রাঙ্গা।
জিএম কাদের বলেন, দেশ, জাতি, ইসলাম ধর্ম ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে এরশাদের অনেক অবদান আছে। খবর বাংলানিউজের
জানাজায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে মরহুমের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল আলম রুবেলসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে মরহুমের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় এরশাদের মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হয়। এ সময় এরশাদের ছোটভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘এরশাদ সাহেব একজন ভদ্র, মার্জিত মানুষ ছিলেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন।’
এ সময় প্রয়াতের স্ত্রী রওশনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামীর পক্ষে দেশবাসীর ক্ষমা চেয়েছেন। আর ছোটভাই জিএম কাদের ছিলেন আবেগাপ্লুত।
এরশাদের মরদেহে নেতাকর্মীদের শেষ শ্রদ্ধা : পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ রাজধানীর কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে আনা হলে সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান দলের নেতাকর্মীরা। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও। এরশাদের মরদেহ দেখতে সকাল থেকেই নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন।
শেষে মরদেহ পুনরায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার নিজের এলাকা রংপুরে। সেখানকার জিলা স্কুল মাঠ/ ঈদগাহ মাঠে তার চতুর্থ জানাজা হবে। এরপর সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় এনে দাফন করার কথা। তবে জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে। এরশাদের দাফন বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।

রংপুরে এরশাদের জন্য কবর খনন : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে মহানগর জাতীয় পার্টি। রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকায় এরশাদের বাসভবন পল্লী নিবাসের পাশে তার বাবা মরহুম মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল হাসপাতাল এলাকায় লিচু বাগান চত্বরে তাকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকালে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর জাপা সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কবরের জায়গা নির্ধারণ এবং নিজেই মাটি কেটে কবর খননের কাজ শুরু করেন।
কবর খননের কাজ শুরু করার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সিটি মেয়র বলেন, এরশাদ জীবিত থাকাকালে দর্শনা এলাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে দুটি স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন। এর একটি হচ্ছে তার বাবার নামে মকবুল হোসেন জেনারেল অ্যান্ড ডায়াবেটিকস হাসপাতাল এবং তার পাশেই ‘পল্লী নিবাস’ নামের বাসভবন। এরশাদ রংপুরে এলে সার্কিট হাউজ বা অন্য কোথাও রাতযাপন করতেন না। নিজের বাড়িতেই অবস্থান করতেন।
মেয়র বলেন, ‘আমরা এমন জায়গায় এরশাদকে সমাহিত করবো যেখানে তিনি নিজ হাতে অসংখ্য লিচু গাছ রোপণ করেছিলেন। তাকে সমাহিত করার পর বিশাল এলাকাজুড়ে মিউজিয়ামসহ মাজার কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। যাতে দলীয় নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ, বিদেশি মেহমানরা তার কবর জিয়ারত করতে পারেন সে ধরনের সব আধুনিক ব্যবস্থা করা হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই জাপা নেতা বলেন, ‘এরশাদ বলে গেছেন তিনি মারা গেলে তাকে যেন পল্লী নিবাসেই সমাহিত করা হয়। তাকে ঢাকার বনানীতে যেখানে সমাহিত করার কথা বলা হচ্ছে সেটা সেনানিবাস এলাকা, সেখানে সাধারণ মানুষ যেতে পারবে না। ফলে কেন একজন সফল রাজনীতিবিদ জনপ্রিয় নেতাকে জনগণের যাতায়াত নিষিদ্ধ এলাকায় দাফন করা হবে? আর সারা দেশের মানুষ এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা চান এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করতে। কারণ, রংপুরে তার শৈশব-কৈশোর লেখাপড়া সবকিছু এখানে, তার বাবা-মায়ের কবর এখানেই আছে। তাছাড়া তিনি রংপুরের মানুষের প্রাণের চেয়ে প্রিয় নেতা। যেকোনও মূল্যে আমরা এরশাদের মরদেহ রংপুর থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে দেবো না। প্রয়োজনে লাখো নেতাকর্মী রক্ত দেবে।’
এদিকে এরশাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মকবুল হোসেন হাসপাতালে দিনব্যাপী কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রংপুর নগরীর সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আহ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি। রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজও এ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দিয়েছে। রংপুর জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, গত রবিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এইচএম এরশাদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। ওইদিন বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সম্পন্ন হয় তার প্রথম জানাজা। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুতে তিনদিনের শোক পালন করছে দলটি।