রাঙ্গুনিয়ায় ২ সন্তানকে বিষ খাইয়ে মায়ের আত্মহত্যা

70

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের সিকদারপাড়ায় সোমবার রাত ৯টার দিকে গৃহবধূ ডেজি আক্তার (২৮) তার দুই সন্তান ইলাফ নুর তাইফা (৬) ও ইসরাত নূরকে (১০ মাস) বিষ খাইয়ে, এরপর নিজে বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। ডেজি ওই এলাকার মুদির দোকানদার নুর নবী ওরফে বাহদুরের (৩২) স্ত্রী। ডেজি ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বাহদুর তার স্ত্রী ও সন্তানদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর পালিয়ে যান। লাশগুলো ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বাহাদুরের জেঠাতো ভাই নাছির উদ্দিন জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে বাহদুরের ভাই নুরুজ্জামান ঘরে বিষের গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন। বাহাদুরও ওই সময় দোকান থেকে ছুটে আসেন। এরপর ডেজি ও শিশুকন্যা দু’জনকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ১২টার দিকে তাইফা ও ইসরাত নূর মৃত্যুবরণ করেন। রাত ৩টার দিকে ডেজিও মারা যান।
ডেজি আক্তারের ভাই সাইফুল আলমের স্ত্রী শামীমা আক্তার জানান, পশ্চিম সরফভাটা মীরেরখীল গ্রামের কবির আহমদ লেদুর ৬ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ডেজি। ২০০৯ সালের ১৪ মে পূর্ব সরফভাটার সিকদারপাড়ার আবু সৈয়দ সওদাগরের পুত্রের সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের প্রথম ছয় মাস সুখে কাটলেও পরে নানা অজুহাতে ডেজিকে নির্যাতন করতেন স্বামী। বিয়ের দুই বছর পর বাহদুর সৌদি আরব চলে যান। বিয়ের ৪ বছর পর প্রথম সন্তান জন্ম নিলে তিনি দেশে ফিরে এসে বাড়ির পাশে মুদির দোকান দেন। এছাড়া স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে দুইটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে ভাড়া দেন। এমনকি পাকা বাড়ি নির্মাণ করার সময় ডেজির ভাই তাকে ৫০ হাজার টাকা দেন। বিদেশ থাকাকালীন থেকে স্ত্রীকে পরকীয়া করছেন মনে করে সন্দেহ করতেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ঝগড়া লেগে থাকতো।
ডেজির বড় ভাবি মনোয়ারা বেগম জানান, ডেজিকে সময়-অসময় কেবল মারধর করতেন বাহদুর। অত্যাচার সইতে না পেরে ডেজি বাপের বাড়ি চলে আসতেন। গ্রাম্য মুরব্বীদের মধ্যস্থতায় বাহদুর অত্যাচার না করার অঙ্গিকার করে ডেজিকে নিয়ে যেতেন। ডেজিকে অত্যাচার না করতে প্রায় সময় টাকা-পয়সা দিয়ে বাহদুরকে সাহায্য করা হতো। কিন্তু পাষন্ড বাহদুরের মন গলতো না। তার চাওয়া-পাওয়ার শেষ ছিল না। সর্বশেষ সোমবার দুপুরে ডেজিকে মারধর করা হয়।
এদিকে বিষ খাওয়ার ২০ মিনিট আগেও তার সাথে ঝগড়া করেছিল বলে জানান প্রতিবেশিরা।’
রাঙ্গুনিয়া থানার উপপরিদর্শক মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।
শেষ পরীক্ষা দেওয়া হলো না তাইফার : ইলাফ নুর তাইফা (৬) রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের সিকদারপাড়ায় নিজবাড়ি সংলগ্ন ইকরা ইসলামিক একাডেমির প্রথম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। তার প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছিল। ইতিমধ্যে ৭ বিষয়ের মধ্যে ৬টি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আরবী বিষয়ে তার শেষ পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষাটা দেওয়া হলো না তার। পরীক্ষার কক্ষে তার নির্দিষ্ট আসনটি খালি ছিল। সোমবার রাত ৯টার দিকে তাইফার মা ডেজি আক্তার (২৮) তাইফা ও তার বোন ইসরাত নূরকে (১০ মাস) বিষ খাইয়ে, এরপর নিজে বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
ইকরা ইসলামিক একাডেমির অধ্যক্ষ ডা. নুরুল আবছার জানান, অত্যন্ত মেধাবী তাইফা স্কুলে সবার প্রিয় ছাত্রী ছিল। ভদ্র-ন¤্র স্বভাবের ছিল সে। তার মৃত্যুতে এ স্কুল একজন ভাল ছাত্রী হারালো। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে পারিবারিক কলহের জেরে সবকিছু ছেড়ে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।