রাঙ্গুনিয়ায় মাছ চাষ করে ভাগ্য বদল আজিমের

127

মাছ চাষের মধ্যেই তার ভাগ্য লুকিয়ে ছিল। লুকিয়ে ছিল তার আর্থিক সচ্ছলতার গল্পও। মেধা, মনন আর কঠোর পরিশ্রমে মাছ চাষ করে নিজের ভাগ্যকে সাজিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের মিরের খীল গ্রামের মো. আজিম। ডিগ্রি পড়ুয়া আজিম লেখা পড়া নিয়ে নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রেখেছিল।
গত বছর হঠাৎ করে তার বাবা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্যারালাইসেস হয়ে ঘর থেকে কোথাও যেতে পারেনা। সংসারে বাবার চিকিৎসা আর ভায়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সমস্যা দেখা দেয়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তার উপর সকল দায়িত্ব নিতে হয়। তার আরেক ভাই ও লেখাপড়া করে। সব মিলিয়ে আজিমকে সংসারের হাল ধরতে হয়। নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে নিতে হচ্ছে। অভাবের সাথে রিতিমত যুদ্ধ করে ক্লান্ত করতে পারেনি। তাছাড়া সামনে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। ছোট কাল থেকে আজিম কোন কাজে হারতে শিখেনি। সংসারে অভাব দূর করা আর বাবার মূখে হাসি ফোটানো ছিল তার লক্ষ। শিক্ষিত ছেলে হওয়ায় কারো চাকরি কিংবা কারো মুখ আপেক্ষিক না হয়ে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য কিছু একটা করার স্বপ্নে সারথি হয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে। ফিশারী কর্মকর্তার পরামর্শে মাছ চাষ শুরু করে সামান্য পূজি নিয়ে।
প্রথমে ১টি পুকুর দিয়ে আজিম মাছ চাষ করে। এরপর মৎস্য অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষে এগিয়ে যায়। এখন আজিম বাণিজ্যিক ভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে ৮টি পকুরে মাছ চাষ করে সফল মাছ চাষি কিসেবে উপজেলায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় যুব সমাজের আইডল হিসেবে পরিচিত। তার দেখাদেখিতে এলাকার অনেকে মাছ চাষ করছে।
অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মাছ চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় যে সে ধারনা এলাকায় এখন আজিম প্রমান করেছে। মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুরের পাড়ে বাণিজ্যিক ভাবে পেপে চাষ। পুকুরে মাচাং দিয়ে লাউ চাষ। ব্যাপক ভাবে সবজি চাষ বিশাল আকারে লেবুবাগান করে। তার পুকুরে ও সবজি বাগানে এখন অনেকে কাজ করে। এলাকার অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সামনে এর সংখা আরো বাড়বে। মো আজিম জানায়, লক্ষ থাকে যদি অটুট বিজয় হবেই হবে। নিজেকে বদলে দেওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট।
মাছ চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে বদলে দেওয়ায় সম্ভব। আমি এ কাজে কঠোর অধ্যাবসায় করি। সারাক্ষণ পুকুরে আর বাগান কিংবা সবজি চাষাবাদে ব্যস্ত রাখি। আমার মাছ চাষে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছি। একটি ব্যাংক লোন পাওয়া গেলে সরফভাটায় যুব সমাজকে আমি বদলে দিতে পারব। এখানে কোন বেকার যুবক থাকবেনা। শিক্ষিত বেকার যুবকরাও মাছ চাষে এগিয়ে আসবে।
কোন পুকুর এলাকায় তখন খারি থাকবেনা। সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন আজিম মাছ সবজি লেবু চাষ করে এলাকাকে আলোকিত করেছে। বেকার ছেলেরা ও কিছু একটা করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাভলম্বী হওয়া যায় তার প্রমান আজিম একজনেই। কোন পুকুর কোন জমি খারি রাখা যাবেনা। সবাইকে কিছু না কিছু করতে হবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে জানান, আমাদের অফিস থেকে মাছ চাষে তাকে সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি।
এলাকায় পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য আমরা মাছের পোনাসহ নানা সহযোগিতা দিয়ে আসছি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, জমি কিংকবা পুকুর কিছুই খালি রাখা যাবেনা। আজিমের মাছ চাষ এলাকায় যুবকদের উৎসাহ যুগাবে। ব্যাংক থেকে তাকে ঋণ দেওয়া সহ সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে।