রাঙ্গুনিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হাতির মৃত্যু

32

রাঙ্গুনিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। হাতি তাড়াতে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে গিয়ে এই হাতিটির মৃত্যু হয়। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের নারিশ্চা জয়নগর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এর পরই গোপনে হাতিটিকে ৭ ফুট গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়। খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বন অফিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে হাতিটির উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেন। এই ঘটনায় বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে হাতি হত্যার দায়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে বিবাদী করে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নারিশ্চা বিট কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নান জানান, পদুয়া জয়নগর এলাকার সায়ের আহমদের পুত্র আবুল হাসেম (৫০) তার বসতবাড়ি ও কলাগাছ হাতির তান্ডব থেকে রক্ষায় বাড়ির চারপাশে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখে। গত সোমবার রাত ১২টার দিকে প্রায় ৩ টন ওজনের ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী একটি হাতি ওই ফাঁদে জড়িয়ে মারা যায়। পরে কাউকে না জানিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় হাতিটিকে তার বসতবাড়ি থেকে ১০০ গজ দূরে নিয়ে মাটিতে পুতে ফেলেন তিনি।
গোপন সংবাদে এই খবর পেয়ে অভিযান চালান রাঙ্গুনিয়া বন অফিসের কর্মকর্তারা। অভিযানে হাতিটিকে ওই স্থানে মাটির ৭ ফুট গভীর থেকে উঠানো হয়। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসক হারুনূর রশীদ ও শেখ রাসেল এভিয়ারী পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আলিমুল রাজী হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন।
ডা. আলিমুল রাজী বলেন, হাতিটিকে মাটি থেকে উঠিয়ে এটির ময়নাতদন্ত করা হয়। এতে দেখা যায় হাতিটির শুঁড়ে আঘাতের দাগ রয়েছে এবং সারা শরীরে বৈদ্যুতিক শর্টের পুড়া দাগ রয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্টেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছি।
উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় বলেন, বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে বন্য হাতি হত্যা করার খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। আমরা বন্য প্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে পদুয়া জয়নগর এলাকার সায়ের আহম্মদের ছেলে আবুল হাসেম (৫০), তার ছেলে মহিউদ্দিন (২৮), সাহেব উদ্দিন (২৫) ও প্রতিবেশি মেরা মিয়ার ছেলে মো. জেবল হোসেন (৪০) এর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিরা বন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, পাকা আমন ধানের গন্ধে রাঙ্গুনিয়ায় প্রতি রাতে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্য হাতির দল। উপজেলার কোদালা, শিলক, সরফভাটা ও পদুয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় এই তাÐব চলছে। সম্প্রতি সরফভাটা পাহাড়ি এলাকা থেকে রাতের আঁধারে একটি হাতি লোকালয়ে চলে আসে। এটি ওই এলাকার ক্ষেত্রবাজারে অনেক্ষণ অবস্থান করে। তবে রাতেই এটি বনে ফিরে যায়। হাতির পাল গত এক সপ্তাহে ৫ একরেরও বেশি ধান নষ্ট করেছে বলে এসব এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন। এ কারণে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। পাকা আমন ধান বাঁচাতে কৃষকেরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। লোকালয়ে বন্যহাতির পাল প্রতিবছর বছর এভাবে হানা দিলেও হাতি তাড়াতে কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে পাহাড়ে হাতির পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব ও নিরাপদ আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এভাবে হাতির দল হানা দিচ্ছে বলে জানায় বন অফিস। বন বিভাগের কর্মীরা এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন বলে জানায়।