রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ শতাধিক বসতঘর নির্মাণ

5

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় কেটে রাতের আঁধারে ঝুঁকিপূর্ণ অর্ধ-শতাধিক বসতঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড পাইন বাগান এলাকায় সরকারি বীজবাগানের মালিকানাধীন এসব পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে জানা যায়। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বসত ঘরে যে কোন সময় পাহাড় ধসে বড় দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া পাহাড় কাটার এসব মাটি পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রাণীরহাট-কাউখালী সড়ক। এরফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে বলে জানা যায়। পাহাড় কাটা বন্ধ, বাসিন্দাদের সড়িয়ে নেওয়া ও জড়িতদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের রানীরহাট থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কাউখালী সড়ক পথে ইসলামপুর ইউনিয়নের পাইনবাগান এলাকা। সড়কের পাশে সুন্দর মনোরম পরিবেশে পাইন বাগান যে কাউকে মুগ্ধ করে। কিন্তু মূল্যবান এই পাইন বাগান নষ্ট করেই পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর। ইতিমধ্যে অর্ধ-শতাধিক ঘর নির্মাণ করে সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অনেকেই। ঘরের সাথেই লাগোয়া সুউচ্চ পাহাড়গুলো বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে পড়ছে। তবে যেকোনসময় বৃহৎ আকারে ধসে গিয়ে প্রাণহানিরও শংকা রয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ বেলাল জানান, গত কয়েকবছর ধরে রাঙ্গুনিয়া ও কাউখালী উপজেলার কিছু দুষ্কৃতিকারী রাতের আঁধারে সরকারি বীজ বাগানের মালিকানাধীন এসব পাহাড় কেটে সেখানে ঘর নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এখন পর্যন্ত ওই স্থানে পাকা, সেমিপাকা, বাঁশ-বেড়ার তৈরিসহ ছোট-বড় অন্তত অর্ধ-শতাধিক বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো পাইনবাগান এলাকার ৪টি পাহাড়ের অন্তত ১২টি স্পটে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। পাহাড় কাটতে গিয়ে সরকারি বীজ বাগানের মূল্যবান পাইনবাগান ও অন্যান্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করছে চক্রটি। এছাড়া পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় মাটি পড়ে কাউখালী সড়কটিও বৃষ্টির পানিতে জল-কাঁদায় একাকার হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়নত দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে সড়কে। অন্যদিকে পাহাড়ের কোলঘেঁষে নির্মাণ করা এসব বসতঘরে পাহাড়ের মাটি ধ্বসে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ১৩ জুন ইসলামপুর ও রাজানগর এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ২১ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এরচাইতেও বড় ট্রাজেডি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। জানতে চাইলে সরকারি বীজ বাগানের রাঙ্গুনিয়ার স্টেশন কর্মকর্তা বিচিত্র কুমার জানান, বীজ বাগানের পাইনগাছ ও পাহাড় কাটার বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ রাঙ্গুনিয়া থানায় দায়ের করেছি। এছাড়া পরিবেশ আইনেও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিল্কী জানান, সরকারি পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণের একটি অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা এই ব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইফতেখার ইউনুস বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। এরসাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।