রাঙ্গুনিয়ায় ছড়া দখল করে অবৈধ স্থাপনা

23

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

রাঙ্গুনিয়ায় পানি নিস্কাশনের ছড়া দখল করে দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার ধামাইরহাট বাজার ও আশপাশের জনবসতির পানি নিস্কাশনের একমাত্র ছড়াটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই ছড়া দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এই ছড়ার উপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে গত ১৬ বছর ধরে নোটিশ দিয়েই দায় সাড়ছেন প্রশাসন। দখলদারদের কাছে উচ্ছেদের নোটিশ গেলেই আশায় বুক বাঁধেন জলাবদ্ধতায় দূর্ভোগের শিকার গ্রামবাসী। ১৬ বছর ধরেই তারা প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরছেন, পানি চলাচলের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে পালন করেছেন মানব বন্ধনসহ নানা কর্মসুচি। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রাঙ্গুনিয়ার সহকারি কমিশনার (ভুমি) স্বাক্ষরিত নোটিশেরও কোন তোয়াক্কা করছেনা প্রভাবশালী দখলদার চক্রটি।
সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ছড়া থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে সাতদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয় নোটিশে। নোটিশ প্রাপ্তির তেরদিন অতিক্রম হলেও উচ্ছেদের কোন তোড়জোড় না দেখে সামনের বর্ষায় আবারো জলাবদ্ধতা ও দূর্ভোগের চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার ধামাইরহাট বাজার ও আশপাশের গ্রামের বসতভিটের পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত একটি ছড়া। মৌলভি মাগন জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান এলাকায় ছড়াটি দখল করে প্রায় দশটি দোকান ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন মো. হারুন, নুরুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির নামের তিন প্রভাবশালী। উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম নিশ্চিন্তাপুর মৌজায় ৩০ শতক খাস জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে এসব সেমি পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করে তারা। পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার কারণে কবরস্থান ও বসতভিটায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। স্থানীয়রা ২০০৫ সাল থেকেই এসব স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরছেন, পালন করেছেন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসুচি। প্রশাসন শুধুই নোটিশ দিয়েই দায় সাড়েন। স্থাপনা নির্মাণকারীরা প্রশাসনের এসব উচ্ছেদ নোটিশকে পাত্তাই দিচ্ছেনননা। স্থানীয় মৌলভী মাগন জামে মসজিদের মতোয়াল্লী খাজা নিজাম উদ্দিন ছালেকী বলেন, রাস্তার পাশের ছড়া দিয়ে যুগ যুগ ধরে ধামাইরহাট বাজারের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় মো. হারুন, নুরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবিরসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি পানি চলাচলের পথে সেমিপাকা দোকান ঘর নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এর ফলে বর্ষাকালে মসজিদের সামনে কবরস্থান পানিতে ডুবে যায়। তিনি বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়। ১৬ বছর আগে অভিযোগ পেয়েই খাস জায়গায় নির্মিত দোকানঘর সরিয়ে নিতে নোটিশ দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। কিন্তু নোটিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি।
প্রশাসনও উচ্ছেদে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেননি। ১৬ বছর পর আবারো অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব চৌধুরী বলেন, “সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ছড়া থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নিজ উদ্যোগে সরিয়ে না নিলে জনসাধারণকে জলাবদ্ধতার দূর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে স্থাপনা উচ্ছেদসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত দখলদার হুমায়ুন কবির খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় দোকান নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “সরকার যদি চায় খাস জায়গা থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করবেন, তাহলে আমরা ছেড়ে দেব। অপর স্থাপনা নির্মাণকারী নুরুল ইসলাম বলেন, আমার খতিয়ানভুক্ত জায়গার মাথায় সামান্য খাস জায়গায় একটি ছোট দোকান করেছি, তেমন বেশি কিছু নয়। এতে গ্রামবাসীর কোন ক্ষতি হচ্ছেনা বলে তিনি দাবী করেন।