রাঙ্গুনিয়ায় চলছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি

10

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

রাঙ্গুনিয়ায় বোরো আবাদের জোর প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু বিলে বোরো আবাদ শুরু করা হয়েছে। কোথাও আবার আবাদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি শুরু হওয়া তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বীজতলা ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। তবে কৃষকদের পাশে থেকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লোকন বিশ্বাস জানান, উপজেলায় এবার ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড এবং বাকীগুলোতে অন্যান্য উফশী জাতের আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এলক্ষ্যে গত ডিসেম্বর থেকেই কোন কোন কৃষক আগাম বীজতলা তৈরি করে এখন রোপন শুরু করে দিয়েছেন। তবে চারার ঘাটতি পূরণে এখনো বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পুরোদমে শুরু হবে বোরো ধান রোপণ মৌসুম। এই লক্ষে গুমাইবিলের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের জোর প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই অনেক কৃষকের বীজতলা পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ আবার আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকরা পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে জমি চাষ করছেন, কেউ সেচ পানি দিচ্ছেন, কেউ জমির আইল কোটা বাঁধছেন, বীজতলা সমান করছেন, কেউ বীজ বপন করছেন। তবে সম্প্রতি শুরু হওয়া তীব্র শীত এবং শৈতপ্রবাহের প্রভাবে কিছুটা চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষকের কপালে। এই ব্যাপারে গুমাইবিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, আমাদের বীজতলা ইতিমধ্যেই উঠে গেছে। বীজতলা নষ্ট হওয়ার আর কোন আশংকা নেই। ইতিমধ্যেই বোরো আবাদও শুরু হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রণোদনা পাওয়া হাইব্রীড জাতের আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে কৃষক। কারণ এই জাতের ধানে ফলন বেশি। সরকারি প্রণোদনা বীজের বাইরেও কৃষকরা নিজ উদ্যোগেই এই বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা করেছেন। এছাড়া ব্রী ধান- ২৮, ২৯, ৫৮, ৮৯, ৯২, উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের বীজতলা তৈরি হয়েছে বলে তিনি জানান। এই বিষয়ে চন্দ্রঘোনা পাটার পাড়া গ্রামের কৃষক মো. নুরুল হক বলেন, “বীজতলা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। চারাও মোটামুটি উঠে গেছে। তবে কয়েকদিনের শীত ও শৈতপ্রবাহের জন্য চিন্তা হচ্ছে। কারণ এসবের প্রভাবে বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। তবে পলিথিন এবং কৃষি অফিসারদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি।”
কাটাখালী এলাকার কৃষক মোকাররম মিয়া জানান, তিনি এবার ৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করবেন। এজন্য গত ডিসেম্বর থেকেই বীজতলা করেছেন। ইতিমধ্যেই ৩ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ফেলেছেন। বাকীগুলোতে আবাদ প্রক্রিয়া চলছে। বীজতলা যাতে নষ্ট না হয়, নেজন্য কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী তারা কাজ করছেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রুহুল আমিন বলেন, এবার যথা সময়ে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বীজতলার চারা পরিপুষ্ট হয়ে গেছে। তাই তীব্র শীতেও এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তারপরও কৃষকদের বীজতলা রক্ষায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। গেল মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়। এরধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা ছাড়াই কৃষকরা বোরো আবাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আশাকরি এবারও বরাবরের ন্যায় ভাল ফলন হবে।