রাঙ্গুনিয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ৬ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন

68

রাঙ্গুনিয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ৬ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে পুনঃময়না তদন্তের জন্য এই লাশ উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানা যায়। গত ২৪ এপ্রিল দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রাগুনিয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) পূর্বিতা চাকমার নেতৃত্বে উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের বাচাশাহ নগর তার শ্বশুর বাড়ির সংলগ্ন এলাকা থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়। এই সময় চট্টগ্রাম দামপাড়া পুলিশ লাইনের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর উদ্দিন আহমেদ ও গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজন উপস্থিত ছিলেন। গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য এটি কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানান উত্তোলন কাজে আসা ম্যাজিস্ট্রেট। গৃহবধূর চাচা মাহবুবুল আলমের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাউজান উপজেলার কদলপুর ইসলামিয়া পাড়ার আবু তাহেরের মেয়ে সাজেদা মনির (২০) সাথে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা বাচাশাহনগর এলাকার মোজাহের মিয়ার পুত্র গিয়াস উদ্দিনের (৩০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে গৃহবধূকে যৌতুক সহ বিভিন্ন দাবীতে তার উপর নির্যাতন চালাতো শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় গ্রাম্য বৈঠক বসে বার বার সমাধান করা হলেও এরপরও গৃহবধূর উপর অত্যাচার থামেনি। গত বছরের ২০ অক্টোবর সকালে গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ির লোকজন সে ফাসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেয়। খবর পেয়ে বাপের বাড়ির লোকজন গিয়ে দেখে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে শয়ন কক্ষের বিছানায়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে একটি অপমৃত্যুর মামলা দিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এরপর তার লাশ দাফন করা হয় শ্বশুর বাড়ির সংলগ্ন খবরস্থানে। এদিকে ময়নাতদন্তের পর প্রতিবেদনে সে আতœহত্যা করেছে বলে রিপোর্ট আসে। এই বিষয়ে তার মা রুবি আক্তার বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের পর একদিনের জন্যও শান্তি দেয়নি শ্বশুর বাড়ির লোকজন। সে যখন আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদেরকে জানানো হয় তখন সে ছয় মাসের অন্তঃস্বত্ত¡া। সেদিন মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখি মেয়ের লাশ পড়ে আছে বিছানায়। আমাদের বলা হয় তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামানো হয়েছে। তাকে যে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে সারা শরীরে। ঐদিনই পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমার ভাই শহিদুল ইসলামের সাক্ষর নিয়ে লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়। সেখানে যেই প্রতিবেদন আসে, তাতে সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়। অথচ সে প্রতিবেদনে আমার মেয়ের গলায় যে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল তাও আসেনি, এমনকি সে যে অন্তঃসত্ত¡া ছিল তাও আসেনি। এতে বুঝা যায় যে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ভুল ও হত্যাকারীদের দ্বারা প্ররোচিত করা একটি প্রতিবেদন। আমরা তা প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় আদালতে মামলা করলে আদালত গত ১৭ জানুয়ারি লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। আমরা মেয়ে হত্যার সঠিক তদন্তপূর্বক বিচার চাই। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রাঙ্গুনিয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) পূর্বিতা চাকমা বলেন, আদালতের নির্দেশে লাশটি কবর থেকে তোলা হয়েছে। এটি পুনরায় মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।