রাঙ্গুনিয়ায় গরুর দুধ নিয়ে বিপাকে ৩১ দুগ্ধ খামারি

271

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রয়েছেন ৩১ জন দুগ্ধ খামারি। তাঁদের উৎপাদিত দুধ নিয়ে চলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মিষ্টির দোকান সহ নানা প্রতিষ্ঠান। এমনকি রাঙ্গুনিয়ায় উৎপাদিত দুধ নিয়ে যেতো রাঙ্গামাটি-বান্দরবান এলাকার বিভিন্ন সেনাবাহিনী ও বিজিবি ক্যাম্পেও। তবে এখন দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দুগ্ধ খামারিরা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে দুধের চাহিদা একেবারেই পড়ে যাওয়ায় খামারিরা পানির দরে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে অনেক খামারিই এখন দুধ থেকে ননি তুলে রেখে ক্ষতি কিছুটা কমাচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে ননি তুলে রাখে বাকি দুধ ফেলে দেওয়া হচ্ছে। খামারিরা বলছেন, দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই খামারিদের দুধ বিক্রির প্রধান জায়গা। কিন্তু রাঙ্গুনিয়া ও আশেপাশের ছানা, ঘি ও মিষ্টি তৈরির কারখানা বন্ধ। প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ নেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। একদিকে গরুর খাদ্যের দাম কয়েক দিনে বেড়ে গেছে, অন্যদিকে দুধ বেচার জায়গা নাই। এরফলে করোনার যাতাকলে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বড় ৩১টি দুগ্ধ খামার সহ ছোট বড় দুই শতাধিক দুগ্ধ খামারিরা। সরেজমিনে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নে এ এস ডেইরি খামারে গিয়ে দেখা যায়, এই খামারের ৪০টি গরুর দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন খামার মালিক উপজেলা ডেইরি এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. এয়াকুব। তিনি ৪০টি গরু থেকে প্রতিদিন ৩’শ লিটার দুধ পেয়ে থাকেন।
করোনা পরিস্থিতির আগে এ দুধ রাঙ্গামাটি-বান্দরবানের বিভিন্ন সেনা ক্যাম্প সহ আশেপাশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেত এবং বাকি দুধ দিয়ে তার নিজের মিষ্টির দোকানে বিভিন্ন রকম মিষ্টি বানিয়ে বিক্রি করতেন। কিন্তু গত ২৫ তারিখ থেকে করোনা পরিস্থিতিতে কেউ দুধ নিতে যায় না তার খামারে। অন্যদিকে দোকানও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বেড়েছে গরু খাদ্যের দামও। ঋণ নিয়ে গড়া এই খামারে মিষ্টি বিক্রি করতে না পারায় গরুর খাদ্য কিনা থেকে ঋণের প্রিমিয়ামের টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১কোটি ১৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ফার্ম ও দোকান চালু করেছিলেন। প্রতিমাসে ২লাখ ৭১ হাজার টাকা ঋণ দিতে হয়। কর্মচারী ও অন্যান্য খরছে যায় আরো ৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ দুধ পেতাম তা বিক্রি করে মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু ৭/৮ দিন যাবত করোনার কারণে অঘোষিত লক ডাউনের কারণে কেউ দুধ নিতে আসেনা সরকারি আদেশে দোকানও বন্ধ। সবমিলিয়ে চরম বেকায়দায় আমার মতো উপজেলার ৩১জন দুগ্ধ খামারি।
এভাবে আর কিছু দিন চলতে থাকলে সবার ভিটামাটি বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। উপজেলা ডেইরি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘গরুর খাদ্যের দাম কয়েক দিনে বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই আমরা কাহিল। এর ওপর দুধ বেচার জায়গা নাই। করোনার কারণে আমরা পথের ফকির হয়ে যাচ্ছি।’ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা দ্বিন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের আর্থিক সহযোগিতার কোন খাত নেই। তবে এই ব্যাপারে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমরা খামারিদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।’