রাঙ্গুনিয়ায় কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির মহোৎসব

16

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

রাঙ্গুনিয়ায় উর্বর দুই থেকে তিন ফসলি জমির টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি) কাটার ধুম পড়েছে। সাময়িকভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে জমির টপ সয়েল কাটা বন্ধ করতে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন অনেক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল, শিলকের তৈলাভাঙ্গা, লালানগর বিল, লাইগ্যা বিল, রইস্যাবিলিসহ উপজেলার অধিকাংশ জমিই ঊর্বর মাটি সমৃদ্ধ। এসব জমিতে বছরে দু’টি মৌসুমে ধান, সরিষা, শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়। কিন্তু কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই জমির মালিকের সাথে কথা না বলেই টপ সয়েল কেটে বসতঘরের মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহার করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে উপজেলার শিলক ইউনিয়নের তৈলাভাঙ্গা বিলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুই ফসলি এই বিলের টপ সয়েল কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে এখানে। রাস্তার পাশে বিলের অনেক জায়গায় বসতঘর নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট করা হচ্ছে। বড় বড় ট্রাকে করে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়। তবে ওই সময় বিলে সাংবাদিক প্রবেশের খবর শুনে স্কেভেটর রেখে পালিয়ে যান চালক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় শিলকের মো. সেলিমসহ কয়েকজন ব্যক্তি মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দুই ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ‘টপ সয়েল জমির প্রাণ। জমির উপরের আট থেকে ১০ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল। আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। কৃষকরা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে তারা জমির ঊর্বরা শক্তিই বিক্রি করে দিচ্ছেন। জমির এ ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে। বিভিন্ন সময় কৃষকদের টপ সয়েল বিক্রি থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে’।
এ বিষয়ে কথা হয় শিলক ইউনিয়নের মো. নজরুল, মো. দিদার, মো. জাহাঙ্গীর, আবদুস সবুর, উকিল আহমদ, মো. হারুনসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, জমির টপ সয়েল কাটার কারনে এখানে চাষাবাদ হবে না। মাটি কাটার কারনে সড়ক ভেঙ্গে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটবে। এছাড়া মাটির ভারী গাড়ি চলাচলের কারনে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
টপ সয়েল কাটার বিষয়ে অভিযুক্ত মো. সেলিম বলেন, ‘জমির মাটি সামান্য কাটলে এতে জমির কোনো ক্ষতি হয় না। আবার দীর্ঘদিন ধরে জমিতে পলি পড়ে পড়ে উঁচু হয়ে যায়। ওই উঁচু জমি থেকে মাটি কেটে তারা কৃষকের উপকারই করছেন। এতে কৃষক নগদ টাকাও পায়, জমির ফসলও ভালো হয়’।
শিলক ইউপির সদস্য মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘জমির মাটি কাটার কারনে সড়ক নষ্ট হওয়ার বিষয়টি শিলক চেয়ারম্যান শুনে আমাকে পাঠিয়েছে। যিনি রাস্তার পাশ থেকে টপ সয়েল কাটছেন তাকে রাস্তাটি মেরামত করে দিতে বলেছি। তিনি রাস্তা মেরামক করে দেবেন এবং জমির মাটি আর কাটবেন না বলেছেন’।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী জানান, ‘তৈলাভাঙ্গা বিলে জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে শুনেছি। উপজেলার বিভিন্ন বিলে টপ সয়েল না কাটতে অভিযান চালানো হচ্ছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে ঘর নির্মাণ করতে গেলে অনেক জায়গায় কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় জরিমানাও করা হয়েছে। টপ সয়েল কাটার ওপর অনেকটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও গোপনে মাটি বিক্রি করছেন কৃষকেরা। শিলকের তৈলাভাঙ্গা বিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।