রাঙ্গুনিয়ার চার ইউনিয়নে ৩৪ বছর ধরে ‘ভয়ংকর সালাম’

246

সবুর শুভ

আাবদুস সালাম। রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর বাড়ি। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকায় তার ভয়ংকর পদচারণা দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে। ডাকাতি, এসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, হত্যা চেষ্টা ও হত্যার মতো ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০টির বেশি মামলা। বিভিন্ন মামলায় ইতোমধ্যে সাজাও হয়ে গেছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও এলাকায় থাকেন প্রকাশ্যে। এরশাদের আমলে যেমন তার ও তার বাহিনীর দাপটে রাজানগর, লালানগর, পারুয়া ও দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের লোকজন তটস্থ ছিল, বিএনপি সরকারের আমলেও একই রকম অবস্থা। আর বর্তমান সরকারের আমলে তার বেপরোয়া ভাব এতটুকু কমেনি। গত ৩৪ বছরে সরকারের পর সরকার আসলেও সালামরা সবসময় ছিল ক্ষমতার কাছাকাছি। বর্তমান সরকারের আমলে উল্টো আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরাও তার টার্গেটে পরিণত হয়েছে একের পর এক। সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট স্থানীয় বাজারে আবদুল খালেক নামে যুবলীগের এক নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় মামলার কারণে গা ঢাকা দেন সালাম। এর আগে এ মামলায় হাইকোর্টে দু’বার জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন।
তথ্য মতে, তখন এরশাদ আমলের শ্বাসরুদ্ধকর সময়। ১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাস। রাঙ্গুনিয়ার লালানগরে বানগাজির বাড়ি ডাকাতি দিয়েই অপরাধের হাতেখড়ি সালাম প্রকাশ সালাইম্যার। এ ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় (মামলা নং-৮(১১)৮৭) সালামের সাজা হয় যাবজ্জীবন। সাজার পরও থেমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। পরের বছর ১৯৮৮ সালের মে মাসেই অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। থানায় মামলা হয়। সেই থেকে সালাইম্যার অপরাধ রেকর্ডের পাতায় যোগ হয়েছে এসিড নিক্ষেপ, ডাকাতি, হত্যা চেষ্টা, অপরহরণ ও হত্যাকান্ডের মতো ভয়ংকর ঘটনার। বর্তমানে ২০ মামলা নিয়ে তার দাপুটে পদচারণা এতটুকু কমেনি। কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ঘটনার ভয়াবহতায় সালাম কোন কোন সময় অন্য এলাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। প্রশাসনের চাপে পুলিশী তাড়া বেড়ে গেলে আবার বিদেশেও পাড়ি জমান সময় সময়। কিন্তু তার দাপট কমে না এতটুকু।
তথ্য মতে, ১৯৮৭ সালে এরশাদের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা রেকর্ড হয় রাঙ্গুনিয়া থানায়। স্থানীয়রা বলছেন, মামলার চেয়ে ঘটনা অনেক বেশি থাকলেও প্রতিটি ঘটনায় তখন মামলা করার সাহস পায়নি ভুক্তভোগিরা। এরপর আসে বিএনপির শাসনামল। দাপট শুরু হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। তার ক্যাডার হিসেবে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন সালাম, তার বাহিনী এবং তার ভাইয়েরা। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ৫ মামলা হয় সালাম ও তার ভাই আলমগীর বাহিনীর বিরুদ্ধে। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সাজাও আছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে গা ঢাকা দেয় সালাম ও তার ভাইয়েরা। পরে ওই আমলেই সালাম পাড়ি জমান সৌদিআরব।
২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির আমলে এলাকায় দাপট চলতে থাকে সালাম ও তার ভাইদের। এ দাপটের কারণে এলাকাছাড়া হয় অসংখ্য মানুষ।
২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলে ভোল পাল্টে ফেলে। গা থেকে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির লেবাস ঝেড়ে ফেলেন। এবার অন্য লেবাসে চলে তার সীমাহীন দৌরাত্ম্য। এলাকায় একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকলেও রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ অজানা কারণে চুপচাপ থাকে।
এলাকার লোকজন জানান, গেল কয়েক বছরে সরকারদলীয় লোকেরাই তার শিকারে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের ইসমাইল হোসেন টিটু, ২০২০ সালে প্রবাসী মুসলিম সিকদার ও গত ৯ আগস্ট আবদুল খালেককে মারাত্মক জখম করে সালাম ও তার ভাইয়েরা। টিটুর মতো অন্য দু’জনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
এ বিষয়ে আবদুল খালেকের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরকারী তার আত্মীয় মুসলিম সিকদার জানান, আবদুল খালেকের উপর হামলাকারীরা ১৯৮৭ সাল থেকে এলাকায় অপরাধ করে আসছে। সরকার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে ভোল পাল্টে নেয় তারা।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মাহবুব মিল্কীর বক্তব্য হচ্ছে, সন্ত্রাসী সালাম ও অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে।