রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে দরপত্র ছিনতাই

20

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, মেডিকেল কলেজে অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘নিরাপত্তা সেবা কর্মী সংগ্রহ ক্যাটাগরি ৫’এর দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। এতে ২২ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। এ দরপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এর মধ্যে দরপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগ দেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাজদ্বীপ ট্রেড সার্ভিসেস লিমিটেড।
রাজদ্বীপ ট্রেড সার্ভিসেস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়ন্ত লাল চাকমা বলেন, সকাল ৮টার সময় দেড় লাখ টাকার পে অর্ডার সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিন্টু মারমা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বরুন নেওয়ানকে সাথে নিয়ে দরপত্র জমা দিতে মেডিকেল কলেজে যাই। কলেজে প্রবেশ করতে যুবলীগ নেতা শাহ এমরান রোকনের ছোট ভাই শাহ এমরান রিপন ১৫-২০ জন যুবক নিয়ে আমাদের পথে গতিরোধ করে দরপত্র প্যাকেটটি ছিনিয়ে নেয়। আমরা দরপত্র জমা দিতে পারিনি। ঘটনার সাথে সাথে আমি ৯৯৯ নম্বরে অভিযোগ দিই। পরে এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করি। এরপর মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের কাছে দরপত্র প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
৯৯৯ এ ফোন দিলে খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক সাগর বড়ুয়া মেডিকেল কলেজে যান। সকাল ১০টায় মেডিকেল কলেজে শাহ এমরান রোকনকে দেখা যায়। এ সময় তিনি কলেজের তিন তলায় উঠে দরপত্র জমাদানের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান।
এ সময় তার কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কলেজে দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। সেসময় রোকন পুলিশকে বলেন, সে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে মেডিকেল কলেজে তার কাজ চলছে। তবে কলেজে দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি।
মেডিকেল কলেজের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দরপত্র পদ্ধতি এমন যে, যেকোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না। এতে অংশ নিতে হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স লাগে। রাঙামাটির একমাত্র রাজদ্বীপ ট্রেড সার্ভিসের এটি আছে। মূলতঃ রাজদ্বীপকে কাজ পাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য এ কাজ করা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার এসআই সাগর বড়ুয়া বলেন, আমরা কলেজের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি। সেখানে দেখা গেছে ১৫-১৬ জনের একদল যুবক ঠিকাদার জয়ন্ত লালের কাছ থেকে দরপত্র কেড়ে নিয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি আমরা।
সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, শাহ এমরান রোকনের ছোট ভাই শাহ এমরান রিপন সকালে ১৫-২০ জন যুবক নিয়ে মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে জয়ন্ত লাল ও মিন্টু মারমা দুটি মোটর সাইকেল নিয়ে মেডিকেল কলেজে প্রধান ফটকে প্রবেশ করা মাত্র শাহ এমরান রিপন হাতের ইশারায় তার সহযোগীদের মোটর সাইকেলগুলোকে আক্রমণের নির্দেশ দেয়।এ ব্যাপারে জানতে রিপনের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে রিপন কল রিসিভ করেনি।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া বলেন, ঘটনাটি কলেজের ভিতর হয়নি। তবে তদন্তে এ ধরনের ঘটনার সত্যতা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রহণ করব।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ এমরান রোকন। তিনি বলেন, জয়ন্ত লাল চাকমা স্থানীয় একটি অনলাইন এ এবং থানায় যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। মূলতঃ আমাদের পরিবারের সুনাম নষ্ট করতে এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। রোকন আরো বলেন, আমি দীর্ঘদিন সুনামের সাথে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। সামনে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন।এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ আমার পরিবারের সুনাম নষ্ট করে দিতে ষড়যন্ত্র করছে। মিন্টু মারমার বিষয়ে রোকন বলেন, মিন্টু কেন জয়ন্ত লালের সাথে যাবে। তার সাথে তো জয়ন্ত লালের ব্যবসা নেই। আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে রিপোর্ট করে অন্যায় করা হয়েছে।