রাঙামাটিতে ৩ দিনের বিজু অনুষ্ঠানমালা শুরু

10

রাঙামাটি প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, পাহাড়ের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখানকার পরিস্থিতি খুবই নাজুক। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন কোথাও নিরাপত্তা নেই। মানুষ সব সময় আতঙ্কে বসবাস করে।
গতকাল সোমবার সকালে পাহাড়িদের বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটিতে আয়োজিত তিন দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব চরম সংকটের সম্মুখীন। জুম্ম সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত ষড়যন্ত্রে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। জুম্ম জনগণের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হলেও শাসকগোষ্ঠীর সদিচ্ছার অভাবে আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেবল পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই সম্ভব জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ নানাভাবে নিষ্পেষিত হচ্ছে। জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশ এবং অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান সন্তু লারমা।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা করে সন্তু লারমা বলেন, জুম্ম জনগণের প্রধান এ সামাজিক উৎসব সার্বজনীন। এটা একক কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর নয়। উৎসব নিয়ে কোনো প্রকার মতবাদ, বিরোধ বা ভেদাভেদ কখনো কাম্য হতে পারে না।
এদিন সকাল ১০ টায় বিজু উপলক্ষে রাঙামাটিতে শুরু হওয়া তিন দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয় রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে। এ সময় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সন্তু লারমা। এতে সভাপতিত্ব করেন ‘বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু সাংক্রান ও বিহু ২০২৩’ উদ্যাপন কমিটির আহব্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, শিক্ষাবিদ মঞ্জুলিকা খীসা, শিক্ষক ও সাহিত্যিক শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, সুশাসনের জন্য নাগরিক রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুসুম চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব ইন্টু মনি তালুকদার।
উদ্বোধন শেষে রাঙামাটি পৌরসভা থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া বিকাল ৩ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি চিংহ্লামং মারী স্টেডিয়ামে ঐতিহ্যবাহী জুম্ম খেলাধূলা, বিকাল ৩ টায় বলী খেলা এবং সন্ধ্যায় কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শেষ দিন আগামিকাল বুধবার ভোরে শহরের রাজবন বিহারের পূর্বঘাটে ফুল ভাসিয়ে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে পুস্পাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। একই সঙ্গে ঘরে ঘরে শুরু হবে তিন দিনের মূল উৎসব। এরপর ১৬ এপ্রিল রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়ায় মারমা সম্প্রদায়ের সার্বজনীন ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার মধ্য দিয়ে এ বছরের উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।