রাঙামাটিতে বেশিরভাগ ইটভাটাই অবৈধ

18

এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে গড়ে তোলা বেশিরভাগ ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে অবৈধভাবে। অভিযোগ মতে, আইন অনুযায়ী পাহাড় কাটা অবৈধ হলেও তা তোয়াক্কা করছেন না ইটভাটার মালিকরা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর ৬(খ) অনুযায়ী পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় কাটা সম্পর্কে বিধি-নিষেধ রয়েছে। এতে বলা আছে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা যাবে না।
এছাড়া আইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম নেই। কিন্ত রাঙামাটিতে বেশিরভাগ ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে এবং বনের ধারে। ইটভাটার ধোঁয়ায় শিক্ষার্থী ও লোকালয়ের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা যায়, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়িতে ২টি, কাপ্তাইয়ে ১টি, রাজস্থলীতে ৩টি, লংগদুতে ৩টি ও কাউখালীতে ১৬টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়। এসব ইটভাটায় আইন অমান্য করে কাঁচামাল হিসাবে পাহাড় থেকে কাটামাটি এবং জ্বালানি হিসাবে বনের কাঠ ব্যবহার করছে। এতে দিনদিন বাড়ছে পাহাড়ধসের ঝুঁকি এবং উজাড় হচ্ছে বন। তাই হুমকিতে পড়ছে বন ও পরিবেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ মার্চ হাইকোর্টে রিটের শুনানি হয়। শুনানি শেষে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ১৩০টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদের আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে পরবর্তী ৬ সপ্তাহের মধ্যে অপসারণ করে অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ও প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওইদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ১৩০টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে রাঙামাটির ২৫টি, খাগড়াছড়ির ৩৫টি এবং বান্দরবানের ৭০টি বলে জানা গেছে। হাইকোর্টের আদেশে রাঙামাটিতে গড়ে তোলা বিভিন্ন ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয় জেলা প্রশাসন। পাহাড়কেটে মাটি ব্যবহার এবং জ্বালানি হিসাবে বনের কাঠ পোড়ানোর অপরাধে বাঘাইছড়ির ২টি ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ ভাটা ২টি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে ইটভাটার মালিকরা রিট করায় প্রশাসনের অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে অবাধে ইটভাটাগুলো পরিচালনা করে যাচ্ছেন মালিকরা। এর আগে ২০২১ সালের ২৩ মার্চে রাজস্থলী উপজেলার প্রধান সড়ক লাগোয়া পাহাড় কেটে ‘বিআরবি ব্রিকফিল্ড’ নামে একটি ইটভাটা গড়ে তোলার অপরাধে মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে প্রশাসন। বর্তমানে সেই ইটভাটাটিও অবাধে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই সময় হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা করি। বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভাটার মালিকরা হাইকোর্টে রিট করায় উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের মারিশ্যা রেঞ্জ কর্মকর্তা নির্মল কুমার কুÐু বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রশাসন ও বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।