রাঙামাটিতে গাছে গাছে বিদ্যুতের লাইন!

45

আইনে না থাকলেও জীবন্ত গাছকে বিদ্যুতের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাঙামাটি শহরে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের এ কাজ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, শহরের কলেজ গেট-টিটিসি এলাকায় গাছের ডাল কেটে স্ট্যান্ড বসিয়ে যেনতেনভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ লাইনের তার ছিঁড়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে ওই প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন, এসব তিনি জানতেন না। এখন জেনেছেন; ব্যবস্থা নেবেন।
পিডিবি সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি শহরে ১১ কেভি লাইনের উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর-ই-এলাহি অ্যান্ড ব্রাদার্স। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। গত ২২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ কাজ ৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
রাঙামাটি শহরের কলেজ গেট-টিটিসি মোড় দিয়ে নামার আগে ‘বৃষ্টি হার্ডওয়্যার’ নামে একটি দোকান রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে একটি বড়সড় আম গাছ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ গাছের ডালপালা কেটে এর মাঝে দিয়ে ১১ কেভির বিদ্যুৎ লাইনের তার টানা হয়েছে। ওই এলাকার আরও কিছু জায়গায় দেখা যায়, বেশকিছু গাছের ডাল কেটে বৈদ্যুতিক স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। ডালের সঙ্গে বৈদ্যুতিক স্ট্যান্ড বেঁধে রাখা হয়েছে হালকা জিআই তার দিয়ে। এতে ভারী বাতাসে যেকোনো সময় তার ছিঁড়ে স্যান্ডগুলো নিচে পড়ে পথচারীদের হতাহত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এ ছাড়া, ভারী বাতাসে এক তারের সঙ্গে অন্য তারের স্পর্শে আগুন লাগার ঝুঁকিও রয়েছে।
টিটিসি এলাকার ‘বৃষ্টি হার্ডওয়্যার’-এর মালিক পাভেল দাশ বলেন, ‘আমার দোকানের ওপরের আম গাছের ডাল কেটে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে। কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমি পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। পরে এ নিয়ে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করি’।
বিপ্লব গুপ্ত নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘পিডিবি বৈদ্যুতিক খুঁটি বসিয়েই কাজটা করতে পারতো। কিন্তু তা না করায় আমরা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছি। তারা (পিডিবি) যেভাবে গাছের ডালে বৈদ্যুতিক স্ট্যান্ড বসিয়ে তার দিয়ে বেঁধেছে, এতে গাছের ওপর চাপ পড়ছে। পাশেই একটি বহুতল ভবন রয়েছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই ভবনের বাসিন্দারাও রক্ষা পাবেন না’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
টিটিসি এলাকার বাসিন্দা রকি চাকমা বলেন, ‘গাছের ওপর এবং গাছের মধ্যদিয়ে যেভাবে বিদ্যুতের সংযোগের তার নেওয়া হয়েছে, এটা বিপজ্জনক। এভাবে পিডিবি কাজটা করতে পারে না। তারা এটা অন্যায় করেছে’।
টিটিসি এলাকার ব্যবসায়ী লিটন দে বলেন, ‘যেভাবে ১১ হাজার কেভির লাইন দিয়েছে, প্রবল বাতাস এলে এক তারের সঙ্গে অন্য তার লেগে যাবে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়’।
এ ব্যাপারে পিডিবির রাঙামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার বলেন, ‘এটি বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। এই কাজ দেখভালের দায়িত্ব আমাদের না’।
এ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বক্তব্য দেয়নি। আর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামেই মূলত অফিস করি। রাঙামাটিতে তেমন যাওয়ার সুযোগ হয় না। জরুরি কাজ থাকলে যাওয়া হয়। যেহেতু কাজের ত্রুটির বিষয়টি জেনেছি, অবশ্যই তদারকি করবো’।