রাঙামাটিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ নেই কোন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ

132

করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ প্রতিরোধে সদরসহ রাঙামাটির হাসপাতালগুলোতে এখনও পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। চালু হয়নি হাঁচি, কাশি, সর্দি-জ্বরের রোগীদের আলাদা চিকিৎসাসেবা ও নিরীক্ষা কেন্দ্র। এ অবস্থায় বাড়ছে ঝুঁকি এবং জনমনে আতঙ্ক। যদিও সিভিল সার্জন বলছেন, আতঙ্কের তেমন কিছুই নেই। এ নিয়ে সচেতনতাই আসল সতর্কতা। সংক্রমণ প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতার অবলম্বন করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম তোড়জোর রেখেছে জেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ভারত থেকে ফেরত ২জন কোয়ারেন্টাইনে না থেকে ঘুরাফেরা করার দায়ে একজনকে ১০হাজার টাকা ও অপরজনকে ৫হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। জেলা প্রশাসনের এনডিসি তাপস দাশ বলেন, সারা দেশের ন্যায় এখানেও আমরা সরকারের আদেশ পালন করছি। সরকার বলেছেন বিদেশ ফেরত লোকজন ১৪দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর চিকিৎসক সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে করলে সে তখন স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারবে। কিন্তু বিদেশ ফেরত লোকজন সরকারের বিধিবিধান না মানাতে তাদের জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন,ভারত ফেরত রাখাল নাথ জনস্মূখে মাছ বিক্রি কালে ১০হাজার টাকা জরিমানা করি অপর জন মিশু সাহাকে ৫হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর বাকি দুজনকে প্রাথমিক ভাবে সর্তককরার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভোভোভে সূত্রে জানা যায়, মার্চেই এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫৩ প্রবাসী রাঙামাটির নিজ বাড়িঘরে ফিরেছেন। ফেরত আসা এসব দেশ বেশিরভাগই করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত। যেমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে স্পেন, চীন, ভারত কনগো, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, সুদান, মিয়ানমার, কাতার প্রভৃতি। এ পর্যন্ত বিদেশ ফেরত ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তারা কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। অন্যদেরও তীক্ষè নজরে আনা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত বুধবার জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সভায় পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশেষ করে বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তাদের প্রতি তীক্ষè নজর রাখতে এবং এসব বিদেশ ফেরত লোকজনের সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশী প্রবেশে নিষোধাজ্ঞা জারিসহ পর্যটক আগমণও বন্ধ করে দিতে বলে দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্ক নয়। সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক থাকা জরুরি। এ নিয়ে যাতে কেউ কোনো রকম গুজব ছড়াতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের সঠিক তথ্য দিয়ে তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। ভাইরাস নিয়ে কারও কোনো সন্দেহদেখা দিলে জরুরিভাবে তাকে হাসপাতালে গিয়ে হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে। সবাইকে সব ধরনের নিয়মনীতি ও নির্দেশনা পালন করতে হবে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা সন্দেহজনক রোগী চিকিৎসায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ এখনও নেই। হাসপাতালে চালু হয়নি হাঁচি, কাশি, সর্দিজ্বরের রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসাসেবা ও নিরীক্ষা কক্ষ। যদিও সিভিল সার্জন বিপাশ খীসা দাবি করে বলেন, এসব রোগীর চিকিৎসায় দুইদিন আগে আলাদা সেবাকক্ষ খোলা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, এ ধরনের রোগী চিকিৎসায় যে কক্ষটি খোলার কথা সেটি বন্ধ।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার জন্য যে দুটি কক্ষ চালু রয়েছে, সেগুলোতেও তালা দেয়া। আবাসিক চিকিৎসকের কক্ষটিও তালা দেয়া ছিল। ওষুধ কাউন্টারেও কেউ ছিলেন না। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. এন্টনি চাকমা বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তা আপনারাও জানেন। আমরাও ঝুঁকির মধ্যে। পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদিও নেই। হাঁচি, কাশি, সর্দিজ্বরের রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা সেবা ও নিরীক্ষা কক্ষ এখনও চালু করা হয়নি।
গত শনিবার থেকে চালু করার কথা। চিকিৎসাসেবা দেয়াকালে গøাপস আর গাউন দেয়ার কথা। চালু হলে বুঝতে পারব- কী কী প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দেয়া হয়। তিনি জানান, এখন হাঁচি, কাশি, সর্দিজ্বরের মৌসুম। এসব রোগীরা তো আসছেন। তাদেরকে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। এসব রোগীদের চিকিৎসায় বহির্বিভাগে ৯ ও ১০নং কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসেবা দেয়া হচ্ছে। কারও করোনা ভাইরাসের সন্দেহ হলে তাদেরকে তীক্ষè পর্যবেক্ষণে আনা হচ্ছে।
পরে বহির্বিভাগ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো রোগী বা চিকিৎসা সেবাদানকারী নেই। ওই দুটি কক্ষসহ আবাসিক চিকিসকের কক্ষটিও তালা দেয়া। আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবরের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জোরালো পদক্ষেপ নিয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হচ্ছে।
বর্তমানে যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে, তারা সবাই সুস্থ আছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সদরসহ জেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সদর হাসপাতালসহ ৫০ জনের সক্ষম তিনটি চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসাসেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।