রাখাইনে রোহিঙ্গা বসতি নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো

33

মিয়ানমারের রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতিকে নাৎসি বাহিনীর দখলকৃত ইউরোপের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ তদন্তে গঠিত জাতিসংঘ তদন্ত দলের সদস্য ক্রিস্টোফার সিদোতির এই তুলনা করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভাইস নিউজ জানিয়েছে, এই তুলনার মাধ্যমে বোঝা যায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বসতিগুলোর পরিস্থিতি কতটা কঠিন।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘের হিসাবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনও সেখানে থেকে গেছে। দ্য গার্ডিয়ানের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে থাকা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ।
২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থাপন করা হয় আইডিপি ক্যাম্প। তখন থেকেই এই ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা ও কামান জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য এসব ক্যাম্পে বসবাস করে। তবে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার।
জাতিসংঘ তদন্ত দলের সদস্য ক্রিস্টোফার সিদোতি বলেন, রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এক লাখ ২৮ হাজার মানুষের বসতিগুলো যেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প- এগুলোকে ওই নামেই ডাকতে দিন। এসব বসতিগুলোর পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এই শহুরে বস্তিগুলো নাৎসিদের দখলে থাকা ইউরোপে বসবাস করা ইহুদিদের মতো। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে নিজেদের দখলকৃত এলাকায় বসবাসকারী ইহুদিদের জন্য ক্যাম্প স্থাপন করে জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি পার্টি। কনসেনট্রেশন ক্যাম্প নামে পরিচিত এসব বসতিগুলোতে ব্যাপক নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এ বছরের শুরুতে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা শুরুর পর জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে জানায় সেখানকার বেসামরিক নাগরিকেরা নতুন যুদ্ধাপরাধের শিকার হতে পারে। শুক্রবার জাতিসংঘ কর্মকর্তা সিদোতি বলেন, গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। তিনি জানান, ২০১২ সালের আগে রাখাইনে ২০ থেকে ৩০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করলেও বর্তমানে সেখানে বসবাসকারীদের সংখ্যা মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ। সিদোতি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে- রাখাইনের গঠন বদলে গেছে। কিন্তু সংকট শেষ হয়ে যায়নি।