রাউজানের যুবকের উদ্ভাবন

2

তৈয়ব চৌধুরী, রাউজান

প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে যেকোনো কাজে সফল হওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ টিপলু বড়ুয়া নামের রাউজানের এক যুবক। পেশায় গ্রিলমিস্ত্রী। এ যুবক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রাথমিকের গন্ডী পেরোতে না পারলেও ছোটবেলা থেকে ওয়ার্কসপে হাতে কলমে নেওয়া শিক্ষা এবং নিজের উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে যিনি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন এমন এক মেশিন যা দিয়ে লোহাকে বিভিন্ন আকৃতি এবং ডিজাইন দেওয়া যাচ্ছে অনায়াসেই। এই মেশিনের সাহায্যে একজন মিস্ত্রির ১ মাসের কাজ ৩ দিনে করা সম্ভব বলে দাবি করছেন এর উদ্ভাবক।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মিস্ত্রির যে গ্রিল ডিজাইন দিতে সময় লাগছে ঘন্টার পর ঘন্টা। একই কাজ মেশিনটির মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিটে। এমন লোহার স্কোয়ার বারের ব্যান্ডিং মেশিন দেশের বাইরে পরিলক্ষিত হলেও দেশে এই প্রথম বলে দাবি ঐ যুবকের।
তিনি জানান, শ্রমিকদের দ্বারা গ্রিল ওয়ার্কসপে রডের ডিজইনের কাজ করা বেশ ঝামেলার। এ কারণে শ্রমিকরা তেমন কাজে আসতে চাইতো না। যার দরুণ গ্রাহককে যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে কষ্ট হতো। তখন আমি চিন্তা করলাম এমন একটি মেশিন যদি তৈরি করা যায় যাতে কাজটা দ্রæত সম্ভব হবে এবং শ্রমিকরাও কাজে আগ্রহ পাবে। এমন চিন্তা থেকে রাউজানের কাগতিয়া বাজারের নিজের ওয়ার্কসপে মেশিনটি বানানোর কাজ শুরু করি ২০১৯ সালের শেষের দিকে। এরপর ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে চারদিকে যখন লকডাউন ও কাজে মন্দা ভাব ঠিক ঐ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ভালভাবে নেমে পড়ি মেশিন তৈরির কাজে। বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে বারবার চেষ্টার মাধ্যমে ৩ বছরের পরিশ্রমে অবশেষে সফল হই।
তিনি জানান, শুরুর দিকে তার এই কাজে সময় ব্যয় করা এলাকাবাসী অপচয় বললেও এখন সকলের চোখে তিনি একজন সফল উদ্ভাবক। মানুষ ভিড় জমায় তার এই আবিস্কার দেখার জন্য।
টিপলু বড়–য়া (৩৫) উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা ডোমখালি বীরমুক্তিযোদ্ধা সুনীল কান্তি বড়–য়ার বাড়ির প্রয়াত ¯িœগ্ধ বড়–য়ার ছেলে। ছোটবেলা থেকে পরিবারের হাল ধরতে তিনি গ্রিলওয়াকর্সপের কাজে নেমে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৬ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তার আজকের সফলতার দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রথমত পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং যন্ত্র সংগ্রহের কারণে প্রথম মেশিন তৈরিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। তবে এখন এই মেশিন সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৮০ হাজার মধ্যে তৈরি সম্ভব বলে জানান তিনি। শুরুর দিকে কাজের সফলতা আসার আগে কারো কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাননি। তবে এখন ব্যক্তি বা সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান যদি তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাহলে তার এই মেশিন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে জানান।
প্রযুক্তির এই যুগে নিজেদের দেশের উদ্ভাবনে হাজারো তরুণের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এই খাতে।
এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুস সামান শিকদার ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন, তার এ আবিষ্কার আমাদের গর্ব। তাকে সহযোগিতা করা গেলে দেশে আরো নতুন উদ্ভাবক সৃষ্টি হবে এবং লাভবান জন্য সম্মানের, গর্বের। তবে তাকে সরকারিভাবে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা আমরা দেখছি।