রশীদ তালুকদার (১৯৩৯-২০১১)

181

বাংলাদেশের প্রথিতযশা ও জনপ্রিয় আলোকচিত্র-শিল্পীদের অন্যতম রশীদ তালুকদার। তার ডাকনাম কাঞ্চন। সহকর্মীদের কাছে ছিলেন প্রিয় ‘রশীদ ভাই’। যৌবনে গোটা রাজশাহীতে পরিচিত ছিলেন ‘প্রিন্স রশীদ’ নামে। বাঙালির স্বাধিকারের দাবিতে স্বাধীনতাপূর্ব ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্থিরচিত্র ধারণ করে তিনি স্মরণীয় করে রেখেছেন নিজেকে। ১৯৩৯ সালের ২৪ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের চব্বিশ পরগনায় রশীদ তালুকদার জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল করিম তালুকদার ছিলেন স্টেশন মাস্টার ও মা রহিমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তার পৈতৃক ভিটা ছিল মাদারীপুরের কালকিনি থানার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে রশীদ বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করতে বাধ্য হন। ১৯৫৯ সালে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে পিআইডি বা প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টে ৮০ টাকা বেতনে যোগ দেন তিনি। এর পর পেশা হিসেবে ফটোসাংবাদিকতাকে বেছে নেন রশীদ তালুকদার। দৈনিক সংবাদে ফটোসাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন ১৯৬২ সালে। তাকে প্রথম এ্যাসাইনমেন্টটি দিয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার। ১৯৭৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগ দেন। সেখানে একাধারে ২৯ বছর চাকরি করে ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে তার আলোকচিত্র। তুলেছেন মাদার তেরেসা, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলনের স্থিরচিত্র ধারণ করে রশীদ তালুকদার স্মরণীয় হয়ে আছেন। ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে শহীদ আসাদের মৃত্যুতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে তার ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ফুঁটে উঠেছিল ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণঅভ্যুত্থানের স্থিরচিত্র হিসেবে মিছিলের সম্মুখভাগে টোকাই বা পথশিশুর ছবি তুলে সকলের নজর কাড়েন তিনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলনের ছবিও তিনিই ধারণ করেন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনকেও ক্যামেরায় ধারণ করেন রশীদ তালুকদার। ১৯৭১ সালে পেশাগত জীবন থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিশে যান তিনি। নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে শুরু করেন বীর সেনানীদের। এ সময় তার প্রিয় ১৩৫ মি.মি. ক্যামেরা সব সময় সঙ্গে থাকত। আলোকচিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বর্ণপদকসহ প্রায় ৭৭টি পুরস্কার লাভ করেন রশীদ তালুকদার। উল্লেখযোগ্য হল- ছবি মেলা আজীবন সম্মাননা (২০০৬), ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির পক্ষ থেকে ‘পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার এ্যাওয়ার্ড’ (২০১০), জাতিসংঘের ‘নিরাশ্রয়ের জন্য আশ্রয়’ প্রতিযোগিতায় একত্রে ৬টি পুরস্কার এবং জাপান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও আসাহি সিমবুন পত্রিকার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় পরপর দু’বার পুরস্কার লাভ। রশীদ তালুকদার ছিলেন বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিখ্যাত এ আলোকচিত্রী ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকায় মারা যান। সূত্র : ইন্টারনেট