রশিতে আটকা খালের রিটেইনিং ওয়াল

35

এম এ হোসাইন

খালের দুই পাশে দেয়া হয়েছে রিটেইনিং ওয়াল। পাশের মাটির চাপে হলে পড়েছে ওয়াল দু’টি। ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করতে সে রিটেইনিং ওয়াল দুটি রশি দিয়ে বেঁধে দূরের খুটির সাথে আটকে রাখা হয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজের অংশ হিসাবে নোয়াখালে এমন রিটেইনিং ওয়াল আটকানোর চিত্র দেখা গেছে।
নগরীর চান্দগাঁও শমসের পাড়া রেল গেইট এলাকায় এই দৃশ্য চোখে পড়ে। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের সামনে দিয়ে বয়ে গেছে চান্দমিয়া সড়ক। সড়কের পশ্চিম পাশে নোয়াখালে চলছে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন কাজ। রেল লাইনের পাশ ঘেঁষে খালের মধ্যে প্রায় একশ ফুট দৈর্ঘ্যরে দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে দু’টি রিটেইনিং ওয়াল। পাশে আছে স্তুপ করা মাটি। কাজ চলমান থাকা অবস্থায় পাশের মাটির চাপে হেলে পড়েছে রিটেইনিং ওয়াল দু’টি। কাজের ত্রুটি থাকায় নির্মাণের সময় এ দু’টি ওয়াল হেলে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে রিটেইনিং ওয়ালগুলো হেলে পড়লেও এখনো সেগুলো অপসারণ হয়নি। খালের মধ্যে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে দু’টি ওয়ালই রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে খুটির সঙ্গে।
এদিকে রিটেইনিং ওয়ালগুলো নির্মাণে ত্রুটি চিহ্নিত করেছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের তদারক সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে ত্রুটি থাকা রিটেইনিং ওয়ালগুলো অপসারণ করে সেখানে নতুনভাবে সেগুলো নির্মাণের আদেশও দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, রিটেইনিং ওয়াল দু’টি নির্মাণের সময় ঠিকাদারের ত্রুটি ছিল। আমরা রিপেয়ার করতে বলেছি। ড্রয়িং দিয়েছি, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এখন রশি দিয়ে আটকানো রিটেইনিং ওয়াল ভেঙে ফেলতে হবে। ঠিকাদারের নিজস্ব ব্যয়ে এ কাজ করতে হবে। সেখানে নতুনভাবে ডিজাইন অনুযায়ী ওয়াল নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে আদেশ দেয়া হয়েছে।
খালটির সংস্কার কাজ করতে গিয়ে কয়েকটি জায়গায় রাস্তা দেবে গেছে। রাস্তার অংশ ভেঙে পড়েছে খালের মধ্যে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা ভারী ক্রেন, এস্কেভেটরসহ অন্যান্য যানবাহনের চাপে সড়কের এমন পরিস্থিতি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এমনিতেই সরু রাস্তাটি এখন অনেকটাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সড়কটির অসংখ্য পথচারীকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। বৃষ্টি পড়লে এই দুর্ভোগ আরো বাড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আতিক বলেন, চান্দমিয়া সড়কের ইসলামিক ডেন্টাল কলেজের সামনের রেল লাইন থেকে শুরু করে হাজির পুল পর্যন্ত রাস্তার বেহাল অবস্থা। সড়কটির কয়েকটি অংশ দেবে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের বড় বড় গাড়ি চলাচল করছে সড়কটি দিয়ে। এসব গাড়ির চাপ সহ্য করতে না পেরে সড়ক দেবে যাচ্ছে। দেবে যাওয়া সড়কের কাজ শুরু হলেও এখনো পরিপূর্ণ কাজ হয়নি। বৃষ্টি পড়লেই দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে।
লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কটির অংশ দেবে গেছে। যে অংশটুকু দেবে গেছে সেখানে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
নগরজুড়ে ৩৬টি খালে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করছে সেনাবাহিনী। এসব খাল ছাড়াও অনেক ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায়। কিছু খালের কাজ শেষ হলেও খালের মধ্যে মাটি থেকে গেছে। বর্ষার আগে এসব মাটি উত্তোলন করার পরিকল্পনা আছে সেনাবাহিনীর। চলতি মাসেই কিছু খালের কাজ শেষ করে সকল বাঁধ খুলে দেওয়া হবে। তবে কিছু খালের কাজ বর্ষার মধ্যেও চালিয়ে নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপর সেনাবাহিনীর পরামর্শক নিয়োগ করে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। আর তা করতেই দুই বছর চলে যায়। এসময়ের মধ্যে শুধু খালগুলো পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার পর একবছর বর্ধিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন করে ডিপিপি তৈরি করে প্রকল্পের মেয়াদ ও বাজেট বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবনা করা হয়েছে।