রমজান এবং আত্মীয়ের হক

108

নজরুল ইসলাম হাবিবী

যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রুজি-রোজগারে বরকত আসুক এবং মৃত্যুর পর তার সুনাম অটুট থাকুক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে”। (আল হাদিস)
পবিত্র কুরআনে আত্মীয় শব্দটি এগার প্রকার গ্রামাটিকেল চেঞ্জ হয়ে ৯৬ এ এসেছে। আত্মা এবং আত্মীয় :
সামাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মা শব্দটির অনেক গুরুত্ব; শব্দটি অনেক ভারী। দর্শনশাস্ত্রে এই শব্দটির উপর অনেক লেখালেখি হয়েছে, অনেক গবেষণা হয়েছে, অনেক কথা বলা হয়েছে। ভাবুকদের বিশ্বাস, আত্মা শব্দটির সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক। অনেকে মনে করেন এই আত্মা অমর ও অজড়, এই আত্মায় পরমাত্মার বসতি। পরমাত্মা সম্পর্কে সনাতন ধর্মে বিশাল বিশাল কথা আছে। বলা হয়, আত্মা জীবের অংশ, শরীর নয়। রুহ, প্রাণ আত্মার কাছাকাছি প্রতিশব্দ। জীবিত দেহে আত্মা থাকে মানুষের মৃত্যুতে আত্মা স্বর্গে বা নরকে অবস্থান নেয়। খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করে যে, স্বর্গে এবং নরকে আত্মা বাস করে। (দেখুন ১ তিমোথি ৩:১৬, ৪:১)।
যেভাবেই হোক প্রতিটি ধর্মে -দর্শনে আত্মার গুণগান করা হয়েছে। আর তাকে স্থান দেওয়া হয়েছে ¯্রষ্টার সাথে, মানে বলা হয়েছে আত্মা মানে পরমাত্মা, ¯্রষ্টা। আত্মা মানে প্রাণ। যার আত্মা নেই সে মৃত। আজকের আলোচনা সে কঠিন তথ্য বা দর্শনকে নিয়ে নয়- আমি বলতে চেষ্টা করছি, এই আত্মা থেকে আত্মীয় শব্দের সৃষ্টি হলে আমাদের আত্মীয় স্বজনকে আমাদের প্রাণের মত ভালবাসতে হবে, সম্মান করতে হবে, দেখাশুনা করতে হবে। এ কথাটিই আমাদের ধর্ম, আমাদের আদর্শ, আমাদের সমাজের সংস্কৃতি আমাদেরকে বলেছে। সাধ্যানুযায়ী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য, ধর্ম মতে ফরজ। আত্মীয়তার হক আদায় করার মধ্যে অগণিত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ।
আল্লাহ বলেন : “ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।” [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২২, ২৩]
এই আয়াতে উদ্যত, অহংকারী মানুষেরাই আত্মীয় স্বজনের সম্পর্ক ছিন্ন করে বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [সহীহ বুখারী : ৫৯৮৪] সহিহ হাদিসে আরও এসেছে- “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তারা রুজি রোজগারে বরকত আসুক এবং মৃত্যুর পর তার সুনাম অটুট থাকুক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে”। সাধ্যানুযায়ী আত্মীয়তার হক আদায় করা আমাদের উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর” আল্লাহ আরও বলেন: “আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কারো উপর দায়িত্বারোপ করেন না।” ভাই-বোন, চাচা-মামা এবং তাদের ছেলে মেয়ে এবং তাদের ছাড়াও অন্য লোক যারা আত্মীয়তা সূত্রে আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট আমাদের উপর নিকটতম অনুসারে তাদের প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। আল্লাহ বলেন, এবং নিকট আত্মীয়ের অধিকার আদায় কর।’ [সূরা বনী ইসরাইল: ২৬] আল্লাহ আরো বলেন, আর আল্লাহর বন্দেগী কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না, এ ছাড়া মাতা-পিতার সাথেও উত্তম আচরণ কর, আর উত্তম আচরণ কর নিকটাত্মীয়ের সাথে।’ [সূরা আন-নিসা: ৩৬] সুতরাং প্রত্যেক লোকেরই উচিত, সে যেন তার নিকটাত্মীয়ের সাথে উত্তম ব্যবহার করে। এ উত্তম আচরণ বিভিন্ন পন্থায় হতে পারে। এখন রামাদান। আপনার যাকাত,-ফিতরা, কাপড়- চোপড় দিয়ে, সেমাই, চিনি কিনে দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে আপনি সেবা করতে পারেন।
আত্মীয়তা রক্ষা করার গুরুত্ব: আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব। আর যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করব।’ (সহিহ বোখারি: ৫৯৮৭) ‘নিকটাত্মীয়রা সুসম্পর্ক রাখায় যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে সে প্রকৃতপক্ষে সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়। বরং নিকটাত্মীয়রা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার পরেও যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখে সেই প্রকৃতপক্ষে সম্পর্ক রক্ষাকারী।’ -(সহিহ বোখারি: ৫৯৯১) ‘সাধারণ গরিবকে দান করার দ্বারা শুধু দানের সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু গরিব আত্মীয়কে দান করার দ্বারা দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে। দান করার সওয়াব আবার আত্মীয়তার সম্পর্ক চর্চা করার সওয়াব।’ -ইবনে মাজাহ: ১৮৪৪
উপরে আমরা উল্লেখ করেছি, আত্মীয় শব্দটি পবিত্র কুরআনে এগার প্রকার গ্রামাটিকেল চেঞ্জ হয়ে ৯৬ এসেছে। এ থেকে বুঝা যায় একজন আত্মীয়ের মর্যাদা সমাজে, ইসলামে, ধর্মে, আল্লাহর কাছে, নবীর কাছে কত গুরুত্ববহ। আসুন, আমরা এ বিষয়ে পড়াশোনা করি, আত্মীয়-স্বজনের মর্যাদা সম্পর্কে আমাদের প্রজন্মকে বলি, তারা যেন তাদের আত্মীয় স্বজনদের সম্মান দিতে, ইজ্জত করতে শিখে।
লেখক : কবি ও লেখক
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, কলম সাহিত্য সংসদ লন্ডন