রমজানে যোগসাজশে বাড়তে পারে পণ্যের দাম

33

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায় ভোক্তা সংশ্লিষ্ট গ্রæপগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। এরইমধ্যে কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর আয়োজনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ব্যবসায়ী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি ও দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে গত সোমবার ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় অংশীজনের ভূমিকা বিষয়ক বিভাগীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।পাশাপাশি গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রমজানে চট্টগ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারদর স্থিতিশীল রাখা, নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় করণীয় নিয়ে সংস্থার চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করে ক্যাব।
এতে বক্তারা রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য-পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরদার করার আহŸান জানান। পাশাপাশি গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে দাবি করে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। প্রয়োজনে এসমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কটেরও আহবান জানান।
এছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আশঙ্কা রমজান মাসে বাজারে তেল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাবে। এসব পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সাথে এ বছরের দাম যদি একই হয়, তারপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়বে। তবে পণ্যের কোনোধরনের ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও, ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে পণ্যের দাম বাড়ায় যাতে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারে বর্তমানে ছোলাসহ সবধরনের ডাল, খেজুর এবং চিনির ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে এরইমধ্যে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এরইমধ্যে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যেরই দাম এক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোও রয়েছে। যদিও রমজান মাস শুরু হতে আরো দেড় মাসের মতো বাকি রয়েছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ভালমানের ছোলা গত বছর প্রতি মণ তিন হাজার টাকা করে ছিলো, সেটি এবার বেড়ে ৩৬০০ টাকা হয়েছে। তবে রোজার সময় ছোলার দাম আরো বাড়বে বলে জানান তিনি। এছাড়া মসুরের ডাল মান ভেদে কেজি ৮৮ থেকে শুরু করে ১৩২ টাকা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কিছু কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন চিনির দাম ৫২০ ডলার। এক মাস আগেও দাম ৪৪০ ডলার ছিল। এই দামে চিনি আমদানির পর এর সাথে পরিশোধনসহ আরো কিছু খরচ যুক্ত হয়ে এর দাম আরো বাড়বে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, রোজার বিষয়টি মাথায় রেখে আরও দুই মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এলসি খোলা নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা সহজ করা হয়েছে। রোজা শুরু হওয়ার আগেই বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া যতগুলো পর্যায়ে পণ্য হাত বদল হয় তার কোনো পর্যায়েই যাতে সেগুলো মজুদ না হয়, তা নজরদারি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে এ কাজটি করা হচ্ছে।
বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এবার নতুন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সফিকুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, বাজার কমিটি যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয়, তাই মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে দরকার হলে তাদের অনুমোদন বাতিলের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এবার তাদেরকে চাপে রাখবো। সুতরাং, বাজার কমিটি সক্রিয় থাকলে সেই বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পণ্য মজুদ করা সম্ভব হবে না।
এদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জমান বলেছেন, আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কোনো প্রকার কারসাজি করতে দেয়া হবে না। সেজন্য আমদানিকারক ও উৎপাদককে তাদের পণ্যের সরবরাহ ও বিতরণের দৈনিক তথ্য জেলা প্রশাসনকে প্রদান করতে হবে এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এগুলো মাঠ পর্যায়ে যাচাই করবেন।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্টের চলমান কার্যক্রম আরও জোরদার করে চট্টগ্রামে অনিরাপদ খাদ্যের বিপণন বন্ধ, স্বাস্থ্যসেবার ভোগান্তি ও নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের মতো ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো কঠোরভাবে দমন করা হবে। আর এ কাজে জেলা প্রশাসন, ক্যাবসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন। একই সাথে পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিনের বিরুদ্ধেও সর্বাত্মক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, আকবর শাহ থানা সভাপতি ডা. মাসবাহ উদ্দীন তুহিন, সদরঘাট থানা সভাপতি শাহীন চৌধুরী, জামালখান ওয়ার্ড সভাপতি সালাহউদ্দীন আহমদ, পাহাড়তলী থানার হারুন গফুর ভ‚ঁইয়া, পাঁচলাইশ থানার সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব যুব গ্রæপের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।