রমজানে যাকাত আদায়ের গুরুত্ব

13

আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী

যাকাত ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। যে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা, অথবা সমপরিমাণ যেকোন সম্পদ বা মূল্যের টাকার মালিক এবং এগুলো যদি তার হাতে এক বছর থাকে, তাহলে তার ওপর যাকাত দেয়া ফরজ। ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বছরে একবার তার সম্পদের হিসাব করে শতকরা আড়াই ভাগ দিয়ে দিতে হবে। এ অংশটা গরীব-নিঃস্বদের প্রাপ্য বা হক। যাকাত ধনীদের গরিবের প্রতি কোন করুণা নয় বরং গরীবের অধিকার বা প্রাপ্য।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।’ এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘অতএব আত্মীয়কে দাও তাদের প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত মুসাফিরকেও যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে তাদের জন্য এটা শ্রেয়। (সুরা ৩০:৩৮) উপরোক্ত আয়াতে নিকটাত্মীয় গরীব অসহায়দেরকে যাকাত দিতে বলা হয়েছে। সমাজে নিকটাত্মীয়, নিঃস্ব প্রতিবেশি, গরীব-অসহায়, অভাবীদেরকে যাকাত দেওয়া শ্রেয়। এতে মুসলমানদের মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় হয়।
মনে রাখতে হবে যাকাত গরীব বা নিকটত্মীয়দের প্রতি করুণা নয় বরং তা তাদের প্রাপ্য হক। আমাদের দেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে পবিত্র রমজান মাসে যাকাত আদায় করা হয়। এতে যাকাতদাতার অধিক সওয়াব হয়, কেননা রমজান মাসে একটি ফরজ আদায় করলে ৭০টি ফরজ আদায়ের সাওয়াব হয়। অপর দিকে এতে গরীব অসহায়গণ রমজানের রোজা স্বাচ্ছ্যন্দে আদায় ও তাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে। মূলতঃ নিকটাত্মীয় ও সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠির দারিদ্র্যতা নির্মূলের লক্ষ্যেই ইসলামের যাকাত প্রথা। দারিদ্র্য বর্তমান অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সমস্যা। এর কারণে চুরি-ডাকাতি, হিংসা-বিদ্বেষ, নানা রকম প্রতারণা, অবৈধ উপার্জনসহ নানাবিধ সমস্যার জন্ম নেয় সমাজে। দারিদ্র্য পীড়িত সমাজকে দারিদ্র্যের অভিশাপ মুক্ত করতে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি। সঠিক ও সুপরিকল্পিতভাবে যাকাত আদায় করলে দারিদ্র্য নির্মূল হতে বাধ্য। এমনভাবে যাকাত দিতে হবে যাতে গ্রহীতা স্বাবলম্বী হয়ে যায়, সে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
বাস্তবিক দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমান ও দারিদ্র্য একসাথে থাকতে পারে না। প্রত্যেক সমাজের মহল্লার দরিদ্রদের ওই সমাজের যাকাত দাতারা অথবা যাকাত দাতা নিজ গরীব নিকটাত্মীয়কে যাকাতের অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিলে অবশ্যই দারিদ্র্যতা সমাজ থেকে বিদায় নেবে নিঃসন্দেহে। এলক্ষ্যে সরকারকেও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বেকার গরীব জনগোষ্ঠিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা যাকাতের অর্থে আয়ের পথ বেছে নিতে পারবে। মনে রাখতে হবে যাকাত মূলত দরিদ্রদের অধিকার, অতএব এ প্রাপ্য তাদের নিকট পৌঁছে দিতে হবে।