রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে

20

আর মাত্র দেড়মাস পরেই সিয়াম সাধনার মাস রমজানের শুভাগমন ঘটবে। এ উপলক্ষে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মানসিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে আর্থিক সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে রমজানের নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজার দর নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন মানুষ। কারণ রমজান আসার আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে পিঁয়াজ ছাড়া অন্য সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে ভরা শীতেও সবজির বাজার আগের যেকোন সময়ের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০টাকা বাড়তি। মাছের অভাব নেই বাজারে কিন্তু দামের অগ্নিমূল্যে ক্রেতা হাত দিতে ভয় করছেন। গরু, ছাগল ও মুরগির মাংসের অগ্নিমূল্য সেতো বলাই বাহুল্য। রমজান আসবে আরো দেড়মাস পরে এরমধ্যে যেহারে দাম বাড়ছে, তাতে ধরে নেয়া যায়, সরকার ব্যবসায়ীদের যতই এলসি সুবিধা দিয়ে রমজানের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আনার ব্যবস্থা করুক না কেন তাদের কাছে দাম বাড়ানোর অজুহাত প্রস্তুত আছে। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। পর্যাপ্ত এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজানে পণ্যের দাম আরও বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছে। তাদের ধারণা এবার রমজান মাসে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এদিকে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার রোজায় আমদানি করা পণ্যের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। একইভাবে সরকারের আরেকটি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, রোজার দেড় মাস আগেই গত বছরের তুলনায় আমদানি করা পণ্যের দাম গড়ে ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য মতে, গত ২০ থেকে ২৫ দিনে মানভেদে ছোলা মনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে ডাল বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা। একই সময়ে মণপ্রতি চিনি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া সবধরনের মসলার দাম বেড়েছে। এর মধ্যে এলাসি কেজি প্রতি ২০০ টাকা এবং কেজি প্রতি জিরা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। তাছাড়া মরিচের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা কমলেও ধনিয়া ও হলুদের দাম স্থিতিশীল। আর আদা-রসুনের দাম বাড়লেও খাতুনগঞ্জে বিদেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২২ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকার মধ্যে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার দর নিয়ে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকার যে পাঁচটি পণ্য আমদানির জন্য একাধিক এলসি খোলার সুযোগ করে দিয়েছে, তার প্রতিটি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল। বরং কোন কোন পণ্যের দাম নি¤œগামী। এরপরও ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাত যদি থাকে তাতেও ৫ থেকে ১০ শতাংশ দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের ব্যসায়ীরা সেই মানসিকতা লালন করেন না। তারা পরিস্থিতি ও সুযোগকেই ব্যবহার করতে পরিপক্ক। তারা অসহায়ত্বকে সম্বল করতে অভ্যস্থ। এরপরও আমরা আশা করি, মানুষ হিসেবে নিজেদের অবস্থান থেকে দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা দেখে তারা সামর্থের মধ্যেই বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়াস চালাবে। আমরা লক্ষ করে আসছি, সরকার রমজানের প্রয়োজনীয় পাঁচ নিত্যপণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে উৎসাহিত করছে। দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। এর পরিমাণ গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় অনেক বেশি। রমজান মাসে পাঁচটি পণ্যের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর বাজার স্বাভাবিক রাখতে এসব পণ্য আমদানিতে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। একইভাবে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ মেট্রিক টনের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। এ বছর ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারিতে ছোলার এলসি কিছুটা কমেছে। ৪২ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুললেও গত বছরের একই সময় ছিল ৩৬ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন। এ বছর ২৯ হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন খেজুরের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বাজারে ডলার সংকট ও দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি প্রক্রিয়া কমে আসছে। এক্ষেত্রে সরকারকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। ব্যবসায়ীদের ঋণপত্র খোলার প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। আরা আশা করি, যত আশঙ্কাই থাক সর্বশেষ রমজান মাসে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না।