রমজানে কৃত্রিম সংকটকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে প্রশাসন

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান বলেছেন, একটি দেশ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলা- এই তিন চাকার সমন্বয়ে চলে। কিন্তু এই তিনের মধ্যে সমন্বয় না হলে আমরা বিপদে পড়ে যাব। তাই এই তিন চাকার মধ্যে সমন্বয় জরুরি। রমজান মাসকে ঘিরে অনেকে অতি মুনাফা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল পণ্যের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করতে চায়। যারা এ ধরণের কার্যক্রমে লিপ্ত হবে কিংবা কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে প্রশাসন। এক্ষেত্রে কোনো ধরণের তদবির বা ছাড় দেয়া হবে না।
গতকাল সোমবার সকালে আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাপ্লাইচেইন ব্যাপকভাবে বিঘিœত হয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দৃঢ়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে ভোগ্যপণ্য বিতরণ কর্মসূচি এবং সকল ভোক্তাদের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে আমদানিতে শুল্ক হ্রাস ও অব্যাহতিসহ নানামুখী কারণে রমজান ও ঈদ কেন্দ্রিক সাপ্লাইচেইন নির্বিঘ্ন রয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের সকল উদ্যোগে চিটাগাং চেম্বার সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা করবো; তবে অবশ্যই সাপ্লাইচেইন ঠিক রাখবো যাতে করে ভোক্তাদের কোনো অসুবিধা না হয়। তাই কৃত্রিম সংকট তৈরি না করে, সকল ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের উৎসব কেন্দ্রিক ছাড় দেয়ার নজীর স্থাপন করার আহŸান জানান চেম্বার সভাপতি।
বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, রমজান ও ঈদকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বিঘœ রাখতে আমরা মনিটরিং বাড়িয়ে দিব। পাশাপাশি প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনে সাধারণ জনগণের স্বার্থে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ’র ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, রমজান পবিত্র মাস। তাই নৈতিকতার দিক বিবেচনা করে সীমিত লাভ করে পণ্য বিক্রি ও ভেজালরোধ এবং কৃত্রিম সংকট না করে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।
সভার সিদ্ধান্তসমূহ বিভিন্ন ট্রেডবডির নেতৃবৃন্দকে তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে জানানোর আহŸান জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ড. বদিউল আলম বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় ও মনিটরিং না থাকায় আমরা এ ধরণের সভা করছি। ব্যবসায়ীরা যদি সচেতন হয় তাহলে প্রশাসনের কঠোরতার প্রয়োজন হয় না। তবে যারা অসাধু উপায় অবলম্বন করবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পাইকারী থেকে খুচরা পর্যন্ত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কোনো ভাউচার দেখাতে পারে না। ফলে ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি করে তারা। তাই ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচার ছাড়া যারা অতি মুনাফার লোভে ব্যবসা পরিচালনা করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
সভায় চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরসহ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস’র জয়েন্ট কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা, চিটাগাং চেম্বার পরিচালক এ কে এম আক্তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, ক্যাব’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার সাবেরী, মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, পাহাড়তলী ব্যবসায়ী সমিতির জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর দোকান মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম, মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’র আবুল কাশেম, চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি মাহবুব রানা, মিমি সুপার মার্কেট’র সভাপতি জয়নাল আবেদিন কাঞ্চন, চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন (মুহিম) বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে চেম্বার পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), অঞ্জন শেখর দাশসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।