রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের অপব্যবহার এবং কিশোর গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে খাদ্য মজুদ ও জাল মুদ্রার বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করতে র‌্যাবের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় এমন পণ্য মজুদ করে রাখে এবং আরো বেশি লাভের আশায় দাম বাড়াতে অন্যান্য অনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে। আপনাদের তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার সকালে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) ফোর্সেস এর ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে র‌্যাব সদর দপ্তর কুর্মিটোলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন রমজান মাস। এই রমজান মাসে এটা খুব দুর্ভাগ্যের বিষয়। কারণ, রমজানকে বলা হয় সংযমের মাস। কিন্তু আমরা দেখি এই সময় আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে তারা যেন সংযমতার পরিবর্তে আরো লোভী হয়ে পড়ে। যে নিত্যপণ্যগুলো আমাদের বেশি প্রয়োজন সেইগুলোর মজুদদারি দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারসাজি তারা করে থাকে। এই অসাধু ব্যবসায়ী এবং পাশাপাশি যারা চোরাকারবারি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ঈদ সামনে আসলেই জাল মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায়। সে সব বিষয়েও নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। যদিও এসব বিষয়ে অভিযান চলছে, কাজেই সেই অভিযান আপনারা অব্যাহত রাখবেন। সেটাই আমাদের কাম্য। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে আরকটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে কিশোর গ্যাং, কভিড-১৯ মহামারির সময় এদের উত্থান ঘটেছে। এই ব্যাপারে অভিযান চলছে এবং এই বিয়ষটির দিকে আমাদের আরো দৃষ্টি দিতে হবে। আর মাদক একটি পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিশেষ করে যুব সমাজের মেধা ও কর্মশক্তি নষ্ট হচ্ছে এবং তারা বিপথে চলে যাচ্ছে। এই মাদক বিস্তার প্রতিরোধে র‌্যাব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে যা আরো বেশি কার্যকর করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মাদক সেবনকারি শুধু নয়, মাদক ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর কোন কোন এলাকা থেকে মাদক আমাদের দেশে ঢোকে সেসব রুট চিহ্নিত করে তা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর প্রতিসহিংসতা, ধর্ষণ, নারী পাচার প্রভৃতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্যাতিতা নারীদের পুনর্বসানেও তিনি র‌্যাবের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক এম. খুরশীদ হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিযর সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে র‌্যাব ফোর্সেস এর বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন হয়।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদর দপ্তরে পৌঁছলে র‌্যাবের একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
তিনি বলেন, দেশের অবকাঠামোগত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তাঁর সরকার যে করছে তা সফলভাবে অব্যাহত থাকবে যখন আইন শৃঙ্খলা বাজায় থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারি সংস্থাগুলো এই ব্যাপারে সচেতন থাকবে।
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই র‌্যাবসহ প্রতিটি সংস্থা ও বাহিনীকেই তাঁর সরকার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের যা যা প্রয়োজন আমরা করেছি এবং র‌্যাবকে ইতোমধ্যে ১৫টি ব্যাটালিয়ান সমৃদ্ধ চৌকস ত্রিমাত্রিক সংস্থা হিসেবেই আমরা গড়ে তুলেছি। কারণ, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি এবং দেশের মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা এনে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে র‌্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনায় পুলিশ পদকের পাশাপাশি তাঁর সরকার র‌্যাব মহাপরিচালক পদকও প্রবর্তন করবে বলে ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, র‌্যাব মহাপরিচালক পদক প্রণয়নের মাধ্যমে এই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আরো উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার সৃষ্টি হবে। র‌্যাবের কাজের আকাঙ্খা আরও বাড়বে বলেই আমি মনে করি।
র‌্যাবের অভিযান পরিচালনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করে তিনি এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেন।
দেশের সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করে তাদের পুনর্বাসনসহ, চোরাচালান, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি মোকাবেলায় র‌্যাব সদস্যদের সাহসী ও কার্যকর ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানব সৃষ্ট দুর্যোগও আছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখি আমাদের বিরোধী দল নামের সংগঠনও সন্ত্রাসী কর্মকাÐে লিপ্ত হয়। এই সময় তিনি গত ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের পাশাপাশি গত ২৮ অক্টোবরের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, পিটিয়ে পুলিশ হত্যা,অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, রেলকে লাইনচ্যুত করা, রেলে ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা ও জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এসব ঘটনাকে মোকাবেলা করা এবং এর আসামীদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আমি দেখেছি র‌্যাব সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। না হলে দেশে একটি অঘটন ঘটানোর পর এর দায়ভার অন্যের ওপর চাপানোর একটা প্রবণতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গত নির্বাচনের পূর্বের কোনো একটা সময়ে একটি বড় দেশের র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অনেকের ওপর নিষেধাঞ্জা আরোপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সেখানে আমার প্রশ্ন ছিল যারা আমাদের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, জলদস্যু, বনদস্যুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা বা মানুষের অধিকার সংরক্ষণে যারা কাজ করেছে তাদের ওপর কীভাবে নিষেধাঞ্জা আসে? তাদের অপরাধটা কি? আর কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তো সে আইনের উর্ধ্বে নয়।
প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূল মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও এই বাহিনীর সদস্যরা আরো দায়িত্বশীর কার্যক্রম ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে-সেটাই আমরা আশাকরি।