রদবদলের পরও ওসি নিয়ে অস্বস্তি

75

সিটি নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ে সহিংসতা দমন ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নগর পুলিশের বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কমিশন সচিবালয়ের সুপারিশের আলোকে নগর পুলিশের পাঁচ থানার ওসির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের রদবদল করা হয়। এরপরও ইসি পুরোপুরি অস্বস্তিমুক্ত হতে পারছে না। নির্বাচনী মাঠে ওসিদের কারও বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষ থেকে ‘বিতর্কিত’ তৎপরতার অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি প্রচারণা শুরুর পর এ পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিভিন্ন সময় ও বিষয়ে প্রেরিত পত্রাদেশও এড়িয়ে গেছেন থানার ওসিদের অনেকে।
সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের অনেকের কাছ থেকেই প্রতিদিনই কমবেশি অভিযোগ জমা পড়ছে। এর মধ্যে আচরণবিধি লংঘন, প্রচার কার্যক্রমে বাধা, পোস্টার ছেঁড়া ও ভাংচুরসহ বিভিন্ন ধরনের বিষয়াদি রয়েছে। সেগুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অভিযোগের ধরন অনুযায়ী আমরা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যুর পাশপাশি নির্বাচনী মাঠে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কাছে অভিযোগে বর্ণিত ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দিয়ে পত্র প্রেরণ করি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। আমাদের প্রেরিত পত্রাদেশের সবকটির প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পুলিশ কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পত্র প্রেরণ করা হচ্ছে।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার পর থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের অনেকেই একে অন্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনসহ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট সংক্রান্ত নানা কর্মকাÐের অভিযোগ করেছেন। যা অব্যাহত রয়েছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই সংক্রান্তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কাছে বর্ণিত ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে পত্র দেয়া হয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। এরইমধ্যে জমা হওয়া অর্ধশতাধিক অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুই-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে পত্রাদেশ প্রেরণ করা হয়। তবে ওসিদের কাছ থেকে প্রতিবেদন প্রাপ্তির সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এসব বিষয়ের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে ওসিদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সিএমপি কমিশনার বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। ইসি সচিবালয়ের ওই সুপারিশের আলোকে গত ১৮ জানুয়ারি সিএমপি কমিশনার পাঁচ থানার ওসি পদে কর্মকর্তাদের রদবদল করেন। কিন্তু এই রদবদলের পরও নির্বাচন কমিশনের অস্বস্তি পুরোপুরি দূর হয়নি। রদবদলের পর গত ২১ জানুয়ারি বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বাকলিয়া থেকে কোতোয়ালী থানায় বদলি হয়ে আসা ওসি নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত তৎপরতার অভিযোগ এনে তাকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। একইভাবে বায়েজিদ থানার ওসি প্রিটন সরকারের কাছে নির্বাচনী অভিযোগ নিষ্পত্তি সংক্রান্তে গতকাল শুক্রবারের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে পত্রাদেশ দিলেও তা দাখিল করা হয়নি। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সিএমপি কমিশনার বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে যে কোনও ধরনের আদেশ বা সুপারিশ আমাদের কাছে তো সরাসরি আসে না। পুলিশ কমিশনার স্যারের দপ্তর হয়ে তারপর আমাদের কাছে আসে। আমি এখন পর্যন্ত কমিশনার স্যারের দপ্তর থেকে কোনওরকম নির্দেশনা বা ম্যাসেজ পাইনি।’ এছাড়া, বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি প্রিটন সরকারের মতামত জানতে মোবাইলে কল করা হলেও সাড়া মিলে নি।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি নগরীর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে আজগর আলী বাবুল নামে স্থানীয় এক মহল্লা সর্দার নিহত হওয়ার ঘটনায় ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ এনে তাকে প্রত্যাহারের জন্য কমিশনে আবেদন করেন ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর। একইভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে চান্দগাঁও থানার ওসির বিরুদ্ধেও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানার ওসির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনও সত্যতা পায়নি কমিশন। তবে ডবলমুরিং থানার ওসির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে সিএমপি কমিশনার যে পাঁচ থানার ওসি পদে কর্মকর্তাদের রদবদলের আদেশ দেন, তার মধ্যে ডবলমুরিং থানা অন্যতম। আদেশে অন্য কর্মকর্তাদের একই পদে এক থানা থেকে অন্য থানায় রদবদল করা হলেও শুধুমাত্র ডবলমুরিং থানার তখনকার ওসির দায়িত্বে থাকা সদীপ কুমার দাশকে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, নির্বাচনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যদেরকে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মধ্যে থেকেই নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে, তাদের যে কারও সুবিধা-অসুবিধার দায়দায়িত্ব অবশ্যই আমি নেব। এর বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করলে বা করতে চাইলে আমি এলাউ করবো না। আমাদের সামনে এখন বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর শীর্ষে রয়েছে সিটি নির্বাচন। অতীতের অভিজ্ঞতা আর বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।