রক্ষা পাচ্ছে না বিদেশে পলাতক অপরাধীরা

33

বিদেশে ‘পলাতক’ অবস্থায় অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এরই মধ্যে এক শীর্ষ ইয়াবা কারবারির পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার জানতে পেরেছে সরকারের কঠোর অবস্থান, মাদকবিরোধী ও শুদ্ধি অভিযানের কারণে অনেক অপরাধী দেশ ত্যাগ করেছে। তারা আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বসে অপরাধ কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে মাদক কারবারি, সোনা চোরাচালানি, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে অবস্থান করে কর্মকান্ড চালাচ্ছে। সেখানে তাদের অনেকের ‘সেকেন্ড হোম’ রয়েছে। সেখানে বসে চোরাচালান, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, জঙ্গি অর্থায়ণ করছে বলে সরকারের কাছে খবর রয়েছে।
দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া চোরাচালানিরা নির্বিঘ্নে সোনা ও সিগারেট চোরাচালান করছে। বাহক মারফত বিমানযোগে পাঠাচ্ছে সোনা ও সিগারেট। এদেশিয় এজেন্টদের কাছেই পাঠাচ্ছে এগুলো। মাদক কারবারিরা ইয়াবা কারবারও চালিয়ে যাচ্ছে। শত শত কোটি টাকা লগ্নি করছে তারা। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইয়াবা ঘাটে ঘাটে পৌঁছে যাচ্ছে। তাদের নির্দেশ মোতাবেক শত শত কোটি টাকার ইয়াবা বিকিকিনি করছে তাদের এজেন্টরা। বিদেশেওে পাঠাচ্ছে ইয়াবা। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সেখানে বসে চাঁদাবাজি করছে। ব্যবসায়ী, ধণাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে তাদের কাছে পাঠাচ্ছে শিষ্যরা।
জঙ্গি অর্থায়ণের অভিযোগও রয়েছে কতিপয় প্রবাসীর বিরুদ্ধে। তারা বিদেশে বসে জঙ্গি নেতাদের কাছে অর্থ প্রেরণ করছে। সে অর্থ দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে জঙ্গিরা।
বিদেশে অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছে অন্তত শতাধিক বাংলাদেশি। আরও অনেকে অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত বলে সরকার জানতে পেরেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারি অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। বিদেশে কারা অপরাধে জড়িত তা বের করে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অপরাধে জড়িতদের পাসপোর্ট বাতিল করে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে।
র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, অপরাধ করে বিদেশে গিয়েও পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে অপরাধে জড়ালে তা বাতিল করে আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের কারণে বিদেশে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অপরাধী দেশে হোক আর বিদেশে হোক, ছাড় দেয়া যাবে না।
সূত্র জানায়, এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের অর্থ জোগানদাতা জাফর আহমেদ ওরফে টিটি জাফরের বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ এর পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তার পাসপোর্ট বাতিল করতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। পাসপোর্ট বাতিলের পর দুবাই পুলিশের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবে র‌্যাব।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, যেসব অপরাধী দেশের বাইরে রয়েছেন তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসবি, ইমিগ্রেশন ও বিদেশি মিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যাতে ওই অপরাধী দেশে ফিরলে বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়। এমনকি ভিন্ন নামে অপরাধীরা যাতে পাসপোর্ট পেতে না পারেন সে ব্যাপারেও রাখা হচ্ছে নজরদারি।
র‌্যাবের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে টেকনাফকেন্দ্রিক কোনো ইয়াবার চালান ধরা পড়লেই বেরিয়ে আসে ওই চালানের মালিক জাফর। তবে দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে দুবাই থাকায় কোনোভাবে তার ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর জাফরের ব্যাপারে বিস্তাারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডা. মোহাম্মদ ইমরান বলেন, কিছু অপরাধীর কারণে বিদেশের মাটিতে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে এসে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সরকার এসব বিষয়ে নজরদারি করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
আবুধাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক নাছির তালুকদার বলেন, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বিদেশে পালিয়ে এসে অপরাধ করছে কিছু লোক। যার কারণে প্রবাসীদের দুর্ণাম হচ্ছে। তাদের কারণে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বিদেশিদের। এসব অপরাধীদের পাসপোর্ট বাতিলের উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আইনের মুখোমুখি করা দরকার। কয়েকজনকে করলে বাকিরা সাবধান হয়ে যাবে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের শেষ দিকে শ্রীলংকায় একটি হেরোইনের চালান ধরা পড়ে। ৩০২ কেজির সেই চালান ছিল শ্রীলংকার ইতিহাসে হেরোইনের সর্ববৃহৎ চালান জব্দের নজির। ওই চালানের সঙ্গে বাংলাদেশি একটি গ্রূপ জড়িত ছিল। শ্রীলংকার ওই চালান জব্দের ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পরপরই বাংলাদেশ থেকে গা-ঢাকা দেন দুই শীর্ষ হেরোইন কারবারি শেখ মোহাম্মদ আরিফ উদ্দিন (৩৫) ও শেখ আহমেদ হোসেন সুমন। তাদের মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে মালয়েশিয়া পালিয়েছেন আরিফ। পরদিন একই দেশে পালিয়েছেন তার সহযোগী সুমন। এই দুই হেরোইনকারবারির পাসপোর্টসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের চোরাচালানি, ইয়াবা কারবারি, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই বিদেশে বসে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুবাই, আবুধাবি বসেই অপরাধ কার্যক্রম করছে তারা। সোনা ও সিগারেট চোরাচালান, ইয়াবার কারবার ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে তারা। তাদের মাধ্যমে মণে মণে সোনা আসছে দেশে।