রক্তের বন্ধন

61

মুহাম্মদ নুর রায়হান চৌধুরী

১৪ জুন মহান রক্তদান দিবস। যাঁরা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাঁদেরসহ সুস্থ সবল সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কোতোয়ালী ব্লাড ব্যাংকের আয়োজনে “সৃষ্টির সেবায় ¯্রষ্টার সন্তুষ্টি” শীর্ষক সেমিনার, ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখছে স্বেচ্ছাসেবীরা। আমাদের দেশে সামাজিক ভাবে রক্তদানের হার খুব বেশি নয়। পারিবারিক প্রয়োজনে রক্ত দানের বাইরে কেউ তেমন স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে চান না, আবার এটাতে সচেতনতাও লক্ষ্য করা যায় না। কখনও চিন্তা করে দেখেছেন কি, আপনার দেওয়া মাত্র ৩৫০ মিলি রক্ত অর্থাৎ এক ব্যাগ রক্ত একজন মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে?
বর্তমানে প্রায় ৭০-৭৫% প্রসূতি মায়ের সন্তান জন্ম দেয়ার সময় রক্তের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও থ্যালাসেমিয়া, দুর্ঘটনা, রোগীর অস্ত্রপ্রচারসহ নানা কারণে বিশুদ্ধ রক্তের চাহিদা সবসময়ই বৃদ্ধমান থাকে। বছরে প্রায় ৬০ হাজার ব্যাগ রক্ত ঘাটতি থেকে যায় আমাদের। খুবই খুশির ব্যাপার হচ্ছে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুণ। যা আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক। কিছুটা ঘাটতি মিটানোর শুভ সংবাদ। সামাজিক ও স্বেচ্ছায় রক্তদান এ ধরনের বিপদ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, সুস্থ মানুষ রক্তদান করলে কোন ক্ষতি হয় না। প্রতি চার মাস অন্তর একবার করে বছরে তিন বার রক্তাদান করতে পারে। এজন্য অনেক মানবিক ও সমাজমনস্ক তরুণ-যুবক নিয়মিত রক্তদান করছেন। মানুষ মানুষের জন্য কথাটি এখনো সার্থকতা পায় নিবেদিনপ্রাণ স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের কারণেই।
আজকের এই দিনে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সামাজিক প্রণোদনা সৃজনের পাশাপাশি মানবতার স্বার্থে নিবেদিত রক্তদাতাদের প্রতি হৃদয়ের গভীর থেকে অন্তঃহীন শুভেচ্ছা জানানোও আমার আমাদের সকলের কর্তব্য। নিঃস্বার্থ চিত্তে যাঁরা প্রতিনিয়ত অজানা-অচেনা মানুষের সাথে নতুন করে রক্তের বন্ধন রচনা করছেন, বিপন্ন মানুষকে সুস্থতার পথ দেখাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

লেখক : পরিচালক, কোতোয়ালী ব্লাড ব্যাংক