রকমারি ইফতারি : ফুটপাত রেস্টুরেন্টে উপচেপড়া ভীড়

26

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোজার প্রথম দিন। রোজাদারদের সামনে ঘরে তৈরি ইফতারসামগ্রী যতই থাক বাইরের ২/১টা পছন্দের আইটেমতো চাই-ই। দুপুর তিনটার পর থেকে নগরীর নামী-দামি খাবারের দোকান-রেস্টুরেন্টে দেখা গেছে ভীড়। কোন কোনটাতে উপচেপড়া ভীড়। হালিম, স্পেশাল ফিরনি, মেজবানি মাংস, বিরিয়ানি, চিকেন সাচলিক, তনদুরি চিকেন, দইবড়া, রেশমি জিলাপিসহ মুখরোচক নানারকম ইফতারির জন্য রীতিমত ঠেলাঠেলি-যেন এই বুঝি ফুরিয়ে গেল। এই প্রতিযোগিতার সুযোগও নিচ্ছেন বিক্রেতারা। নগরীর জামালখান, আউটার স্টেডিয়াম, ইস্পাহানি মোড়, জিইসি, আগ্রাবাদ, দামপাড়া, চকবাজার এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। সাধারণ মানের খাবার দোকান ও ফুটপাতে এ রকম প্রবল ভীড় না থাকলেও তাদেরও আইটেমের কমতি ছিল না।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর অর্থাৎ দুপুর থেকেই জমে উঠতে শুরু করে ইফতারির দোকানগুলো। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাহারি এসব ইফতার কিনতে ছুটে আসেন ভোজনরসিকরা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিক্রেতারাও ছাড়েন নানা হাঁকডাক।
কাজীর দেউরি মোড় এলাকার সুমন নামে এক রেস্টুরেন্ট কর্মচারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় ইফতারি বিক্রি করছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে ততটা সুন্দর করে আয়োজন করতে পারেননি। এবার আরও সুন্দর করে এই ইফতার আয়োজন করেছেন। প্রথম রমজান হওয়ায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় রয়েছে। ক্রেতার চাপ সামলাতে তাকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।
কয়েকটি দোকান ও রেস্টুরেন্ট ঘুরে জানা যায়, ইফতারি আইটেম বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। রান্না করা চনা কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, আলুর চপ প্রতিপিচ ৫ টাকা, বেগুনি পিচ ৫ টাকা, পেঁয়াজু পিচ ৩ টাকা, ফিরনি কেজি ২৫০ টাকা, চিকেন স্টিক ৪০ টাকা পিচ, তান্দুরি চিকেন পিচ ৮০ টাকা, বিফ স্টিক পিচ ৮০ টাকা, কোরাল ফিস কাবাব পিচ ৮০ টাকা, চিকেন সাচলিক পিচ ৮০ টাকা, ব্রোস্ট চিকেন পিচ ৮০ টাকা, নার্গিস কাবাব পিচ ৩৫ টাকা, কোপ্তা কাবাব পিচ ২৫ টাকা, চিকেন কাবাব পিচ ২৫ টাকা, ফিস কাবাব পিচ ২৫ টাকা, জালি কাবাব পিচ ২৫ টাকা, শাম্মি কাবাব পিচ ২৫ টাকা, ডিম চপ পিচ ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রেস্টুরেন্টে বিফ ও মাটন হালিম কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, চিকেন হালিম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চিকেন বিরিয়ানি প্লেট ১৫০-২০০ টাকা এবং বিফ বিরিয়ানি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইফতারি কিনতে আসা মারুফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ‘যে বেগুনি আমরা গত বছর দুই টাকা দরে কিনেছি এবার তা ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজু, আলুর চপসহ সব ইফতারি আইটেমের দাম বেড়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রোজা আসলে সবকিছু ছাড় দিয়ে বিক্রি করে, অথচ আমাদের দেশে রোজা আসলে সবাই ব্যবসা খুলে বসেন।’
তবে অতিরিক্ত দামে বিক্রির বিষয় অস্বীকার করে দোকানি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে সবজির দাম, ময়দা, তেলসহ আনুষঙ্গিক সব পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই এক-দুই টাকা বেশি দরে বিক্রি না করলে আমরা ব্যবসা করতে পারবো না।’
ইফতারি আইটেমের মধ্যে রোজাদারদের অন্যতম খাবার হচ্ছে খেজুর। দেশে খেজুর উৎপাদন না হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে প্রতিবছর খেজুর আসে। ফলমন্ডির পাইকারি বিক্রেতা এরাবিয়ান ডেটস এর স্বত্বাধিকারি শহিদুল আলম বলেন, ‘এবারে প্রচুর খেজুর আমদানি হয়েছে। বুকিং রেট এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকারকদের একটু বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তবে বিক্রিও ভাল হয়েছে। পাইকারিতে আমরা প্রতিকেজি জাহেদি ১৩০-১৩৫ টাকা, সায়ার ১৫০-১৬০ টাকা, নাগাল ১৮০-২০০ টাকা, দাব্বাস ২৩৫-২৪০ টাকা, মাবরুম ২৪০-৩০০ টাকা, মরিয়ম ৭০০-৮০০ টাকা, আজওয়া ৮০০-১০০০ টাকা, সাফাবি ৪৪০-৪৮০ টাকা, আলজেরিয়ান ২৮০-৩৫০ টাকা, আলজেরিয়ান ছড়া ৩২০-৩৬০ টাকা এবং মেডজুল ৮০০-১১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উমর ফারুক পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রতিটি রমজানি পণ্য আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কেউ যদি অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নেয় বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে এমন খবর পাই সাথে সাথে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনছি। ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানার আওতায় এনেছি। আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’