যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ

35

নিজস্ব প্রতিবেদক

যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে নগরীর কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে ‘অবরুদ্ধ’ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টির বই উৎসব বন্ধ রেখে অভিযুক্ত শিক্ষককে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। তিন ঘণ্টা পর পুলিশ পাহারায় বিদ্যালয় থেকে বের হন ওই শিক্ষক। এ ঘটনায় তাকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বদলি ও অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। একই ঘটনায় জেলা প্রশাসনও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জানা যায়, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। একই অভিযোগে ২০১৩ সালে এই স্কুল থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। অভিযোগকারী ছাত্রী দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় তদবিরের মাধ্যমে চাকরি পুনর্বহাল করেন এ শিক্ষক। মূলত অভিযোগকারীর কিছুদিন পর নীরব হয়ে যাওয়ার ফায়দা নেন এ শিক্ষক। শুরুর থেকে অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় ওই শিক্ষক বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের।
গতকাল বিকালে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক আদেশে অভিযুক্ত শিক্ষককে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। একইসাথে আহমদ মিয়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোমা বড়ুয়াকে কাপাসগোলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বদলির পাশাপাশি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করেছে সিটি করপোরেশন। বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ। একই ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন পূর্বদেশকে জানান, তিন দিনের মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এতে জেলা শিক্ষা অফিসারকে আহŸায়ক এবং জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে সদস্য করা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেলা প্রায় দেড়টা পর্যন্ত ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ের ভেতর অবরুদ্ধ ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান করছিলেন। পরে পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে নিয়ে যান। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ওই শিক্ষককে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী তার অপসারণ চেয়ে ¯েøাগান দেয়। এর আগে সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন অভিভাবকরা। এতে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। এ সময় তাদের হাতে প্রধান শিক্ষক মো. আলউদ্দিনের অপসারণের দাবিতে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তদন্ত করে শিক্ষক মো. আলউদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- স্থানীয় চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুর এমন আশ্বাসে ছাত্রীরা ক্লাসরুমে ফিরে যায়।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, তাকে বদলি করার জন্য বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন শিক্ষক ছাত্রীদের ‘ইন্ধন’ যোগাচ্ছে। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে, স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তোলার সময় শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের হাতে ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়েছে। ‘কেউ তার পাশে ছবি তুলতে দাঁড়ালে মাস্ক খুলে ছবি তোলার জন্য উনি জোরাজুরি করেন এবং গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। কোনো ছাত্রী এর প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হুমকি দিতেন।
মো. আলাউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না এনে আমার বিরুদ্ধে বায়বীয় কিছু অভিযোগ করা হচ্ছে, যাতে স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এবং মেয়র মহোদয় বিরুক্ত হয়ে আমাকে বদলি করে দেন। কেন তাকে বদলি করার চেষ্টা করা হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আলাউদ্দিন বলেন, কিছু লোকের ই-লিগ্যাল ডিমান্ড আছে। তাদের সুবিধার জন্য তারা এটা করছে।