যে কারণে নিরপেক্ষ তদন্ত ও রিপোর্ট চায় চসিক

28

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের লুপের দুইটি পিলারে ফাটলের দাবি উঠলে কারণ অনুসন্ধান ও মেরামতের নির্দেশনা দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) চিঠি দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তারই প্রেক্ষিতে সিডিএ’র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ ফ্লাইওভার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ দল পরিদর্শন শেষে জানায়, এটি ফাটল নয় কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। যান চলাচল করতে কোনো বাঁধা নেই। তারপরও জনগণের মধ্যে বিরাজ করা সংশয় দূর করতে নিরপেক্ষ তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে চসিক।
গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানান, ‘বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি যাচাই করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটির মতামতের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটার আগে ফাটল সৃষ্টির কারণ উদঘাটন ও এর প্রতিকারের বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপককে কমিটির আহব্বায়ক এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) একজন তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলীর সমন্বয়ে দুই সদস্যের একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। এ লক্ষে গতকাল চুয়েটের উপাচার্য ও সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে চিঠি দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। এ কমিটি প্রতিবেদন প্রেরণ করলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে নগরীর চার ফ্লাইওভারের দায়িত্বে থাকা চসিক। বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চুয়েট ও সওজের দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। ইতোমধ্যে চুয়েট ও সওজকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা প্রতিনিধি মনোনয়ন দিয়ে পাঠাবেন।’
গত সোমবার রাতে বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের কালুরঘাটমুখি র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল সৃষ্টির কথা উঠলে পরেরদিন সকালে ফাটল সৃষ্টির কারণ অনুসন্ধান ও মেরামত করার জন্য সিডিএ কে চিঠি দেয় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল আলম। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের হক মার্কেট সংলগ্ন দুইটি পিলারে ফাটল সৃষ্টির কারণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ফাটল সৃষ্টির কারণ তদন্তপূর্বক বের করে মেরামত করার নির্দেশনা দিয়েছে চসিক। তারই প্রেক্ষিতে গত বুধবার র‌্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্লানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্টস লিমিটেডের বিশেষজ্ঞ দল তাদের মতামত লিখিতভাবে চসিককে জানিয়ে দিয়েছেন। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে র‌্যাম্পের নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিপিএম কনসালটেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সোবহান, পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান আলম, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার সামী মো. রেজা, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মনির হোসেন, সিডিএ উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোরশেদুল হক গতকাল সকালে র‌্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ দল চসিক বরাবর একটি প্রতিবেদন প্রদান করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘দূর থেকে এটিকে ফাটল মনে হলেও বাস্তবে এটি ফাটল নয়। কলামের যেখানে ক্র্যাক হয়েছে বলা হচ্ছে সেই স্থানটি স্ক্র্যাপার ও স্টিল ব্রাশ দিয়ে ঘঁষে দেখতে পেলাম এটি ফাটল নয় কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। পিয়ার, কলাম ও সুপার স্ট্রাকচার বক্স গার্ডারের মিলনস্থলে এটির অবস্থান।’
এ প্রাথমিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, র‌্যাম্পের এই লুপটি হালকা গাড়ির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এ জন্য প্রবেশমুখে উচ্চতারোধক বার দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি পরিদর্শনের সময় দেখা যায়নি। এ বিষয়ে চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিন উল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে উচ্চতারোধক বার লাগানোর কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। সিডিএ’র দাবি অনুযায়ী ফাটল না থাকলে যানবাহন চলাচলের জন্য কবে নাগাদ র‌্যাম্পটি খুলে দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য চুয়েট ও সওজের কাছে চিঠি দিয়েছে চসিক। এক্ষেত্রে তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত র‌্যাম্প দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান এ নির্বাহী প্রকৌশলী।