যুবদলনেতা শাওন হত্যায় বিক্ষোভ

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘অন্যায়ভাবে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা না করতে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকার শনিবার বিকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ অনুরোধ জানান। যুবদল নেতা শাওন হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা কখনো সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলায় বিশ্বাস করি না। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা আমাদের শত্রæ নন। আপনারা এই দেশের সন্তান। দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আপনাদেরও দায়িত্ব। শুধু আওয়ামী লীগের কথা শুনে নিরীহ জনগণের ওপর গুলি করা আপনাদের দায়িত্ব নয়। আমরা অনুরোধ করব, আপনারা অন্যায় কোনো হুকুম মানবেন না। এই হত্যার জন্য একদিন না একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাই অনুরোধ করব, অন্যায়ভাবে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশই গুলি করে যুবদলকর্মী রাজা আহমেদ শাওনকে হত্যা করেছে। শাওন যুবদলের প্রমাণিত ও পরীক্ষিত একজন সক্রিয় কর্মী। দলীয় কর্মসূচিতে তার অংশগ্রহণের অনেক ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সে যুবদলের কর্মী নয় বলে পুলিশ ও সরকার এখন মিথ্যাচার করছে। নিহত শাওনকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নোংরা রাজনীতি করছে। সরকার সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচিতে গুলি করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। অবিলম্বে শাওন হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সমাবেশে মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘শাওনকে হত্যার কয়েক দিন আগে ভোলায় নুরে আলম ও আব্দুর রহিমকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। দীর্ঘ একযুগ ধরে এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছে। প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এর প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে।শাওনের এই আত্মত্যাগ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।’
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, মাহবুব আলম, এস এম আবুল ফয়েজ, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আনোয়ার হোসেন লিপু, মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, মো. কামরুল ইসলাম, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু প্রমুখ।

উত্তর জেলা বিএনপি : গতকাল শনিবার সকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উত্তর জেলা বিএনপি। সমাবেশে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক এম এ হালিম বলেন, ‘নারায়নগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে পুলিশ নির্মমভাবে যুবদলকর্মী শাওনকে হত্যা করেছে। শাওনের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না। রক্ত ছুঁয়ে আমরা শপথ করছি যতক্ষণ পর্যন্ত ইভিএম বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। সাধারণ জনগণের অধিকারের জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। ভোলায় ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিমসহ আর কত মানুষ মারলে, মায়ের বুক খালি করলে আওয়ামী লীগ সরকার খুশি হবে এটা জানতে চাই? যেই পুলিশ শাওনকে হত্যা করেছে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’ উপস্থিত নেতাকর্মীদেরকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে না যাওয়ার আহব্বান জানান তিনি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার বিএনপির মিছিল ও সাধারণ জনগণকে ভয় পায় বলে প্রশাসন দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে চায়। ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশে যে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে জনতার জোয়ার দেখে সরকার নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ দিয়ে নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের আর কোনো মায়ের বুক খালি হলে সরকারকে এর সকল দায় দায়িত্ব বহন করতে হবে।’
উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক ও হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক নুর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক যথাক্রমে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, সরওয়ার আলমগীর, কাজী ছালাউদ্দীন, জেলা বিএনপির সদস্য যথাক্রমে আজম খান, আব্দুল আউয়াল চৌধুরী, এড. আবু তাহের, অধ্যাপক কুতুব উদ্দীন বাহার, আবু আহমেদ হাসনাত, জসীম উদ্দিন সিকদার, শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সেলিম চেয়ারম্যান, জাকির হোসেন, অধ্যাপক মো. মহসিন, আবু জাফর চৌধুরী প্রমুখ।

দক্ষিণ জেলা বিএনপি : দক্ষিণ জেলা বিএনপির সমাবেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, নিশিরাতের সরকার তাদের ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য সারা বাংলাদেশে জেল, জুলুম, গুম, খুনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। বর্তমানে তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা যেকোনো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আজ যখন সারা বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার আদায় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে নেমে এসেছে তখনই সরকার জনতার এই গণমিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক এনামুল হক এনাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য মামুন মিয়া, মফজল আহমদ, এড. কাশেম চৌধুরী, ইসহাক চৌধুরী, খোরশেদুল আলম, মোস্তাফিজুর রহমান, এহসানে মওলা, বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক মাস্টার লোকমান ও সদস্য সচিব রেজাউল হক চৌধুরী, বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব চেয়ারম্যান হামিদুল হক মন্নান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক এড. শওকত ওসমান, বোয়ালখালী পৌরসভা বিএনপির আহব্বায়ক শহীদুল্লাহ চৌধুরী, মেহেরা আফরোজ জলি প্রমুখ।