যুদ্ধ নয়, জাতিসংঘে যাবে বাংলাদেশ

22

ঢাকা প্রতিনিধি

সীমান্তে জিরো লাইনে গোলার আঘাতে একজন নিহত হবার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না, আলোচনার মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে চায়। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান না হলে বিষয়টি জাতিসংঘে তোলা হবে বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে তিনি আশা করেন মিয়ানমার সংযত হবে। এখন যে গোলাগুলি, তাদের অভ্যন্তরীণ কনফ্লিক্ট (সংঘাত) সেটা তাদের ভেতরেই যেন থাকে। আমাদের এদিকে যেন না আসে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও শক্তভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করবে, বললেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ঢাকা আহসানিয়া মিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
শুক্রবার রাতে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। ঘুমধুম সীমান্তে জিরো লাইনে রোহিঙ্গাদের একটি ক্যাম্পে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট বান্দরবানের এই তুমব্রু সীমান্তেই মিয়ানমার থেকে দু’টি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়েছিল। এছাড়া গত ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারের গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে। এই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।
তা ছাড়া কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকায় বিদেশি ক‚টনীতিকদের সাথেও বৈঠক করে ঘটনাগুলো সম্পর্ক অবহিত করেছেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ গোলাগুলি চলছে। ঘুমধুম সীমান্তে শুক্রবার সন্ধ্যায়ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সীমানায় এসে যে গোলাবারুদ পড়ছে, এটার কড়া ভাষায় আমরা প্রতিবাদ করছি। ওদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সুস্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কখনোই যুদ্ধ চান না, আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান। তাদের যে ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট (অভ্যন্তরীণ সংঘাত), সেটা তাদের সীমানার ভেতরেই থাকুক। বাইরে যেটা আসছে, সেটার সব সময় প্রতিবাদ করে আসছি।
বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় মিয়ানমারের কথা দিয়ে কথা না রাখার বিষয়ও উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কোনো সময় কথা দিয়ে কথা রাখে না। আমরা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়- সকল চেষ্টাই করে যাচ্ছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই, ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে তারা যেন প্রত্যাবাসিত হয়, সে চেষ্টা আমরা করছি।
সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক
গত শুক্রবার রাতে মর্টার শেল বিস্ফোরণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১ রোহিঙ্গা যুবক নিহত ও ৪ জন আহতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ক‚টনৈতিক পর্যায়েও প্রতিবাদ জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মাইন বিস্ফোরণের ঘটনাটি মিয়ানমারের ভেতরের অংশে ঘটায় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। কারণ সেটি তাদের সীমানা। এ ঘটনায় আহত ব্যক্তি বাংলাদেশি তঞ্চঙ্গা স¤প্রদায়ের সদস্য। তিনি মিয়ানমার অংশে যাওয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। সেখানে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং তিনি সেই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে ১ রোহিঙ্গা যুবক নিহতের ঘটনাটি শুক্রবার রাতে ঘটেছে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। এখনো ২টি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় আছে। সেগুলো ঘিরে রাখা হয়েছে। ওই এলাকায় চলাচলে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরেই বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কূটনৈতিক পর্যায়েও প্রতিবাদ জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে। আমরা শুরু থেকেই সতর্ক আছি। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন, সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। তাদের গোলা যেন আমাদের দেশে না আসে সে বিষয়ে তাদেরকে আগেও জানানো হয়েছে। নতুন করে আবারো জানানো হবে এবং ক‚টনৈতিকভাবেই এটি বন্ধ করার জন্য আলোচনা হচ্ছে।