যুদ্ধের কারণে রপ্তানি কমার শঙ্কা বাড়ছে

15

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে, তবু তা বন্ধের লক্ষণ নেই। সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত রাশিয়া-ইউক্রেনে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। তবে যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাবই ভোগাচ্ছে বেশি বাংলাদেশকে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। সেখানে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্য বিক্রি কমে গেছে। পণ্যের মজুত জমছে। সে কারণে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে আগামী মাসগুলোয় রপ্তানি কমবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়ছিল। করোনার মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি বৃদ্ধি পায় ১৮ কোটি ডলার। তাতে মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৬৬ কোটি ডলার। যুদ্ধের প্রভাবে গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে সেই রপ্তানি ৪ শতাংশ কমে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারে নামে। জুলাইয়ে দেশটিতে রপ্তানি কমে অর্ধেকে নেমেছে। এই মাসে রপ্তানি হয়েছে দুই কোটি ডলারের পণ্য। রাশিয়ায় বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হচ্ছে নিট ও ওভেন পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইল। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের রপ্তানির মধ্যে ৫৮ কোটি ডলারই ছিল পোশাক খাতের। গত জুলাইয়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
অন্যদিকে ইউক্রেনে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার ছোট। এই বাজারে শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হচ্ছে নিট ও ওভেন পোশাক, জুতা, ওষুধ ইত্যাদি। তারপরও করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সে বছর রপ্তানি পৌঁছায় ২ কোটি ৬৮ লাখ ডলারে। তবে যুদ্ধের কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ২৭ শতাংশ কমে ২ কোটি ৩ লাখে নেমেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ছিল ৯৫ লাখ ডলারের। আর গত জুলাইয়ে দেশটিতে মাত্র ৪ লাখ ৪১ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ১২ লাখ ৭২ হাজার ডলারের পণ্য। পশ্চিমা দেশগুলো এক জোট হয়ে রাশিয়ার ওপর নানামুখী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারা সুইফট লেনদেনব্যবস্থা থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বের করে দেয়। এ ছাড়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখে। তাতে দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি জটিল আকার ধারণ করে। বাংলাদেশের অনেক রপ্তানিকারকের অর্থও আটকে যায়। দেশের পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, শুধু রাশিয়া-ইউক্রেনে রপ্তানি কমলে কোনো সমস্যা হতো না। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর দেশগুলোতে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে। এতে বিক্রি কমে যাওয়ায় তাদের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়া কমিয়েছে। চলমান ক্রয়াদেশেও স্থগিতাদেশ দিচ্ছে। আবার দেশেও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগছে শিল্পকারখানা।