যুগপৎ আন্দোলনে নেই জামায়াত

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বরের পর আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোসহ ১০ দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে শনিবারের সমাবেশের দিনও হাত গুটিয়ে থাকবে দলটি।
বিএনপির সঙ্গে দূরত্বের বিষয়টি জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের কথাতেও স্পষ্ট। বিএনপি আলোচনা না করে কর্মসূচি দিলে জামায়াত তাতে অংশ নেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের আলোচনার কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। বরং ‘দূরত্ব রাখার’ নির্দেশ আছে। ফলে জামায়াত তাদের কর্মসূচিতে এল কি এল না, সেটা নিয়ে তারা ‘ভাবছেন না’।
১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোট ছেড়ে চলে গেলেও দলের একটি অংশ বিজেপি নামে দল গঠন করে থেকে যায় জোটে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ও পায় তারা। তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবি হয় জোটের। এরপর বিএনপি জোটের আকার বাড়িয়ে ১৮ দলীয় এবং পরে ২০ দলীয় জোট গঠন করে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই জোটের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট গঠন করে বিএনপি। এবার জোট বাদ দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে জোট ভেঙে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীতে করা এক সংবাদ সম্মেলনে বিদেশি একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধির প্রশ্নে জোট ভেঙে দেয়ার বিষয়টি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরদিন শরিক দলের কয়েকজন নেতাকে ডেকে নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হয় বলে ২২ ডিসেম্বর জানান বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। জোট ভেঙে দিলেও সাবেক শরিকরা সবাই বিএনপির দাবিতে ‘একমত’ পোষণ করে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।
১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠের বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপি ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ২৪ ডিসেম্বর। একই দিন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় জামায়াত। তারাও বিএনপির মতই ১০ দফা দাবি এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সব জেলায় মিছিল করার সিদ্ধান্ত জানায়। তবে সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কারণে দলটির সমালোচনার মুখে ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি। পরদিন বিজ্ঞপ্তি আসে জামায়াতেরও। তারাও ঢাকার কর্মসূচি স্থগিত করে। ২৪ ডিসেম্বর জেলায় জেলায় বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতও মিছিল করেছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
১৭ ডিসেম্বর বিএনপি জানায়, ঢাকার স্থগিত ‘গণমিছিলটি’ হবে ৩০ ডিসেম্বর। সেটি শুরু হবে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে। পরদিন আসে জামায়াতের বিজ্ঞপ্তি, তারা বায়তুল মোকাররমে জড়ো হয়ে মিছিল বের করার ঘোষণা দেয়। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেখানে যায়নি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। পরে মালিবাগে ঝটিকা মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ৫ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১৫ জনকে। সেদিনের পর এখন পর্যন্ত যুগপৎ কর্মসূচির ঘোষণা এসেছে আরও চারটি। তবে এই চারটি কর্মসূচির একটিতেও নেই জামায়াত।
বিএনপির কর্মসূচির দিন ২০ দলের সাবেক শরিক ও গণতন্ত্র মঞ্চ মাঠে নামলেও জামায়াত কেন দূরে, এই প্রশ্নে দলের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের বক্তব্য উঠে এসেছে ‘অভিমান’ আর ‘অসন্তোষের’ সুর। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বলেছে, তারা যুগপৎ আন্দোলনে আছে। কিন্তু বিএনপি আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে যেটা ঘোষণা করছে, সেটা তো যুগপৎ হল না। আমরা আলাদা দল, আলাদা কর্মসূচি আছে। বিএনপির কর্মসূচি সফল করা তো আমাদের দায়িত্ব না।’